বৃহস্পতিবার এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে এ জরিপ চালানো যাবে বলে তিনি আশা করছেন।
যারা এখন কর জালের আওতায় নেই, তাদের কোনো ধরনের চাপ না দিয়েই কর দিতে উৎসাহিত করা হবে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর গুলশানের খাজানা রেস্তোরাঁয় ‘ক্যাটালাইজিং ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “ইতোমধ্যে আমি আমার অফিসারদের সাথে বসে পরিকল্পনা করেছি, বিশেষ করে শহরে যত ফ্ল্যাট বাড়ি আছে এগুলো জরিপ করার জন্য। এর মধ্যে অনেকে আছে ভাড়াটে ফ্ল্যাট মালিক কিম্বা বাড়ির মালিক- তাদের মধ্যে সকলে রিটার্ন দেন কিনা।
“এটা আমরা আস্তে আস্তে পর্যায়ক্রমে অন্তত মাস ছয়েকের মধ্যে শেষ করে ফেলব।”
মোশাররফ হোসেন বলেন, উপজেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোতে যারা ব্যবসা করেন বা ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত যারা নির্বাচন করেন, তাদেরকেও করজালের আওতায় আনার বিষয়ে এনবিআর নজর দিচ্ছে।
গত অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরকে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল। এবার তা বেড়ে ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা হয়েছে।
দেশে ৩৫ লাখ টিআইএনধারী থাকলেও ২০ লাখের বেশি লোক আয়কর রিটার্ন দেয় না জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “সাধারণ মানুষ ইনকাম ট্যাক্স দিতে দুটো কারণে অনক সময় ভয় পায়। একটা হচ্ছে আয়কর আইনজীবী, অপরটি হচ্ছে আয়কর সংগ্রহকারী।
“তারা মনে করে, একবার যদি আয়কর প্রদানকারী হিসেবে নাম লেখাই তাহলে পরবর্তী সময়ে হয়রানির শিকার হতে পারি।”
মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে করদাতার সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ। অথচ প্রতিবেশী দেশেও এ হার ১৮ শতাংশের মত।
“আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে আমাদের করদাতার হার ১২ থেকে ১৩ শতাংশে উন্নীত করতে চাই আমরা।
‘ব্যাক্তিখাতের আয়কর আহরণে বাংলাদেশের সম্ভাবনা’ শীর্ষক একটি ধারণা জরিপের তথ্য উপস্থাপন করে সিপিডির জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, কেবল ৩২ শতাংশ সামর্থ্যবান ব্যক্তি আয়কর দেয়। এমনকি উচ্চ আয়ের ব্যাক্তিদের মধ্যেও এক তৃতীয়াংশ কর দেয় না।
ওই জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫০ শতাংশ মনে করেন, বর্তমান কর ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল। গতবছর কর দিয়েছেন এরকম ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতাও একই কথা বলেছেন ।
অংশগ্রহণকারীদের ৬৫ শতাংশ মনে করেন, কর ব্যবস্থায় দুর্নীতি রয়েছে।
আয়কর আদায় বাড়াতে আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা, তুলনামূলক নিম্ম আয়ের মানুষের জন্য সহজে রিটার্ন দাখিলের ব্যবস্থা করা, কর অফিসকে দুর্নীতিমুক্ত করা, ধনী অথচ কর ফাঁকি দেন- এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার সুপারিশ করেন সিপিডির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে তত্ত্বাধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলামও বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, “আমাদের আরও বেশি হারে বৈদেশিক সম্পদের যোগানের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে আমাদের অবকাঠামোর পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়ানো যায়।”
কর আহরণ বাড়াতে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজ করার ওপরও জোর দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ‘বৈদেশিক সহায়তা ছাড়াই বাংলাদেশ চলতে পারে কীনা’ শীর্ষক আরেকটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন বাজেটের ৯৫ শতাংশ ছিল বিদেশি সহায়তানির্ভর, ৪ থেকে ৫ শতাংশ এসেছে দেশীয় সম্পদ থেকে। বিদেশি অর্থের ৯৫ শতাংশ ছিল অনুদান, বাকিটা ঋণ।
আর বর্তমানে উন্নয়ন বাজেটের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ আসে বিদেশি অর্থ থেকে। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশ ঋণ, আর ৫ শতাংশের কম অনুদান।
এই চিত্র তুলে ধরে ফাহমিদা খাতুন বলেন, “আমাদের বৈদেশিক সম্পদের আর দরকার নেই- এমন চিন্তার কোনো অবকাশ নেই। বরং বৈদেশিক সম্পদের আহরণ বাড়িয়ে আমাদের অবকাঠামো ও শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ প্রয়োজনীয় অবকঠামো তৈরিতে ব্যবহার করতে হবে।”