বিশ্ব ব্যাংকের বেশি সুদের ঋণ নেওয়া শুরু

বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে এই প্রথম আড়াই শতাংশ সুদে ঋণ নিতে চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ; এতদিন সুদের হার ছিল শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2018, 03:23 PM
Updated : 25 Oct 2018, 03:23 PM

অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ায় বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে বেশি সুদে ঋণ নেওয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ।

সংস্থাটির কাছ থেকে এতদিন শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে ঋণ পেত বাংলাদেশ। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় এখন থেকে সুদ গুণতে হবে আড়াই শতাংশ হারে।

বৃহস্পতিবার বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আড়াই শতাংশ সুদে নেওয়া প্রথম প্রকল্পের ঋণ চুক্তি সই হয়েছে।

‘সাস্টেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরি ফিশারিজ প্রজেক্ট’ শীর্ষক এই প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংক ২৪ কোটি ডলার (প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা) ঋণ দেবে।

এই ঋণের জন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ, ১ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদ এবং দশমিক ৫০ শতাংশ হারে কমিটমেন্ট চার্জ দিতে হবে। অর্থাৎ সবমিলে আড়াই শতাংশ সুদ দিতে হবে।

উপকূলীয় ১৬টি জেলায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। প্রকল্পের আওতায় ১০০টি মৎস্য গ্রাম তৈরি করা হবে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলা হয়, গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য খাতের বার্ষিক অবদান ৪ শতাংশের মতো। তৈরি পোশাকের পর এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত।

নতুন ঋণে সুদের হার বাড়ার পাশাপাশি পরিশোধের মেয়াদও কমানো হয়েছে। আগে ৫ বছরের রেয়াতকালসহ ৩৮ বছরে যে ঋণ পরিশোধ করতে পারত বাংলাদেশ। এখন সেই ঋণ ৩০ বছরে পরিশোধ করতে হবে।

ঢাকার শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এই ঋণ চুক্তি সই হয়। সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) জ্যেষ্ঠ সচিব কাজী শফিকুল আযম এবং বিশ্ব ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রতিনিধি জাহিদ হোসেন চুক্তিপত্রে সই করেন।

অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণের সুদের হার বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে ইআরডির বিশ্ব ব্যাংক অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদা বেগম বলেন, “আমরা এলডিসি থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় বিশ্ব ব্যাংকের তালিকায় এখন আমরা গ্যাপ কান্ট্রির তালিকায় চলে এসেছি। ওই তালিকার দেশগুলোকে বিশ্ব ব্যাংক সবচেয়ে কম সুদের ঋণ দেয় না।”

তিনি বলেন, “চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই মাস থেকে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের যেসব প্রকল্পে অর্থায়নের নেগোসিয়েশন হচ্ছে সেগুলোতে আড়াই শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে।”

বিশ্ব ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রতিনিধি ও প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “আসলে বাংলাদেশকে কোনো ঋণের কমিটমেন্ট চার্জ দিতে হয় না। সে হিসাবে নতুন ঋণের সুদ ২ শতাংশ হবে।”

বিশ্ব ব্যাংকের মাপকাঠিতে উত্তরণের পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতিসংঘের মাপকাঠিতেও স্বল্পোত্তত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে রয়েছে।

এসবের কারণে ঋণে সুদের হার বাড়লেও অর্থনীতির সক্ষমতার বৃদ্ধির দিকটি দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে বলেছিলেন, “আমাদের ঋণ পেতে কোনো অসুবিধা হবে না। সুদ হয়ত একটু বেশি দিতে হবে। তাতে কিছু আসে যায় না। ওটুকু আমরা দিতে পারি।”

এদিকে বৃহস্পতিবার চুক্তি হওয়া ‘সাস্টেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ’ প্রকল্প সম্পর্কে জানানো হয়, দেশের সামুদ্রিক একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলে মতো উন্নয়নের পাশাপাশি ‘ব্লু ইকোনমি’ ব্যবস্থাপনা জোরদার করা এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রকল্পটির মাধ্যমে সমুদ্রের তলদেশীয় ও ভাসমান প্রজাতির মাছের পরিমাণ নিরুপণ করা, বাগদা চিংড়ির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিসহ সামুদ্রিক মাছ আহরণে জোর দেয়াও হবে। উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ আহরণে টেকসই ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে, যাতে উপকূলীয় জেলাগুলোতে ক্লাস্টার ব্যবস্থায় শিক্ষণ পদ্ধতির সম্প্রসারণ ঘটিয়ে বাগদা চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে।

অনুষ্ঠানে ইআরডি সচিব বলেন, “এ প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করে এর সফলতা। তাই বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে প্রকল্পটি যথাযথ বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে হবে।”

জাহিদ হোসেন বলেন, “আবহাওয়া প্রতিকূল হলে বা মাছ ধরা নিষেধের সময় অনেক মানুষের কাজ থাকে না। তখন মহাজনদের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে সংসার চালাতে হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের অর্থ সংস্থান করাও অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।”