আরও বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতি

গত অর্থবছরের মত চলতি অর্থবছরের শুরুতেও পণ্য বাণিজ্যে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2018, 03:16 AM
Updated : 18 Oct 2018, 03:16 AM

অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে এই ঘাটতির পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি।

বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধির পেছনে বিভিন্ন বড় প্রকল্পের সরঞ্জাম আমদানির কথা বলেছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান মনসুর।

এছাড়া বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণেও বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে বলে মনে করছেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক জুলাই ও অগাস্ট মাসের বাণিজ্য ঘাটতির যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, এই সময়ে বাংলাদেশের পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১০ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৭৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আর পুরো অর্থবছরে (জুলাই-জুন) বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৮২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

>> ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-অগাস্ট সময়ে ৮৮২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৬৭১ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

>> এ হিসাবে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১০ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

>> তবে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি কমে ৩৯ কোটি ডলার হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার ছিল।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-অগাস্ট সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ডলার।

সাধারণভাবে কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়।

তবে বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশি সহায়তা ছাড়ের পরিমাণ বাড়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) সময়ে সরকারের আর্থিক হিসাবে ভালো উদ্বৃত্ত তৈরি হয়েছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-অগাস্ট সময়ে যেখানে কোটি ৪০ কোটি ২০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল, এবার একই সময়ে সেই উদ্বৃত্ত রয়েছে ৪৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

গত অর্থবছরের জুলাই-অগাস্ট সময়ে ৪৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাংলাদেশে এসেছিল।চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে ৪৮ কোটি ডলার।এ হিসাবে এই দুই মাসে এফডিআই বেড়েছে ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

এই সময়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণ বাবদ দেশে এসেছে ৫৫ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত অর্থবছরে আমদানি বেড়েছিল ২৫ শতাংশের বেশি। সেই ধারা চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেও অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, আমদানির যে উল্লম্ফন সেটা মূলত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বড় বড় কয়েকটি প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানির কারণে।এছাড়া চাল, জ্বালানি তেল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বাড়ায় আমদানি ব্যয় বাড়ছে।

স্বাভাবিকভাবে আমদানি বাড়াকে অর্থনীতির ইতিবাচক লক্ষণ বলে ধরা হলেও ভোটের বছরে আমদানির নামে অর্থ পাচার হচ্ছে কি না- সে বিষয়েও সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।