চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনে তেল আসবে ঢাকায়

চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩৮ কিলোমিটার এলাকায় বসবে ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের এলপিই কোটেড পাইপ। এই পাইপলাইন দিয়ে বন্দরনগরী থেকে রাজধানীতে আসবে জ্বালানি তেলের সরবরাহ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2018, 01:34 PM
Updated : 9 Oct 2018, 01:35 PM

কম সময় ও খরচে এবং নিরাপদে রাজধানীতে জ্বালানি তেল সরবরাহে দুই হাজার ৮৬১ কোটি টাকায় ২০২০ সালের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকারের। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

এজন্য ‘চট্টগ্রাম হতে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প সরকারের সায়ও পেয়েছে।

মঙ্গলবার এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

একনেক সভার পর পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বর্তমানে নৌ ও সড়ক পথে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। কিন্তু জাহাজে তেল আনার সময় অনেক সময় পাইপ দিয়ে চুরি হয়। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এসব ক্ষতি থেকে বাঁচবে সরকার।

মন্ত্রী বলেন, “ঢাকা এবং আশপাশের এলাকায় বছরে  জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন, যা ঢাকায় অবস্থিত গোদনাইল ও ফতুল্লার ডিপোগুলো থেকে সরবরাহ করা হয়।

“বর্তমানে জলপথে প্রায় ৯০ শতাংশ জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। এই বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর প্রায় ২০০টি কোস্টাল ট্যাংকার নিয়োজিত রয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “চাঁদপুরে অবস্থিত বিপণন কোম্পানিগুলোর তিনটি ডিপোতে জ্বালানি তেলের বর্তমান চাহিদা প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। চট্টগ্রামের প্রধান স্থাপনা থেকে কোস্টাল ট্যাংকার যোগে বর্তমানে গোদনাইল, ফতুল্লা  ও চাঁদপুরে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়।”

এছাড়া ঢাকায় অবস্থিত বিপণন কোম্পানিগুলো শ্যালো ড্রাফট ট্যাংকারযোগে উত্তরবঙ্গের বাঘাবাড়ি, চিলমারী ও সাচনা বাজার ডিপোতে জ্বালানি তেল পাঠায়। এই ডিপোগুলোর বর্তমান বার্ষিক চাহিদা প্রায় চার লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন।

মন্ত্রী বলেন, ট্যাংকারে করে এ বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল যথাসময়ে চট্টগ্রাম থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পরিবহনে সরকারকে বিপুল পরিবহন খরচ এবং ঘাটতি বহন করতে হত। এছাড়াও হরতাল ও ধর্মঘটের কারণে জ্বালানি পরিহবন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এ কারণে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

তিনি বলেন, ২০২১ সালের পর দেশের পুরনো বিভিন্ন গ্যাস ফিল্ড থেকে উত্তোলন কমতে থাকবে। দেশে আর কোনো নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত না হলে পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

এমন পরিস্থিতিতে এ প্রকল্পটি দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।

একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্প

>> ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প। এর ব্যয় প্রায় ১০ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা।

>> জরুরি সহায়তা প্রকল্প বিআরবি অংশ (কক্সবাজার আশ্রয়গ্রহণকারী বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের জন্য বিদ্যুতায়ন) প্রকল্প। এর ব্যয় ১০৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

>> রুরাল কানেটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট (আরসিআইপি) প্রকল্প। এর ব্যয় ৩ হাজার ৬৬৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

>> বাংলাদেশ ইমারজেন্সি অ্যাসিসটেন্স (এলইডি অংশ) প্রকল্প। এর ব্যয় ২৯৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

>> বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৯৫৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

>> কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠাইন উপজেলাধীন নির্মিতব্য মিঠাইন সেনা উপস্থাপনার ভূমি সমতল উঁচুকরণ, ওয়েভ প্রটেকশন ও তীর প্রতিরক্ষা কাজ প্রকল্প। এর ব্যয় ৩০৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

>> চট্টগ্রাম জেলাধীন রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলা এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলি ও ইছামতি নদী এবং শিলক খালসহ অন্যান্যখালের উভয় তীরের ভাঙ্গন হতে রক্ষা প্রকল্প। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৯৯ কোটি টাকা।

>> রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া ও রংপুর সদর উপজেলায় তিস্তা নদীর ডান তীর ভাঙ্গন হতে রক্ষা প্রকল্প। এর ব্যয় প্রায় ১৬৯ কোটি টাকা।

>> ক্রস বর্ডার রোড নেটওর্য়াক ইম্প্রুভমেন্ট (বাংলাদেশ) প্রকল্প, গোবিন্দগঞ্জ-ঘোড়াঘাট-বিরামপুর-ফুলবাড়ী-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নতিকরণ প্রকল্প। এর ব্যয় প্রায় ৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা।

>> গোবিন্দগঞ্জ-ঘোড়াঘাট-বিরামপুর-ফুলবাড়ী-দিনাজপুর (আর-৫৮৫) আঞ্চলিক মহাসড়ককে যথাযথ মানে উন্নীতকরণ প্রকল্প। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮৮৩ কোটি টাকা।

>> কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক (এন-১) উন্নয়ন প্রকল্প। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

>> খুলনা সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাসন প্রকল্প। এর ব্যয় ৬০৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

>> দেশের গুরুত্বপূর্ণ ২৫টি (সংশোধিত ৪৬টি) উপজেলা সদর  স্থানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন প্রকল্প। এতে ব্যয় হবে ৪১৯ কোটি টাকা।

>> জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন ভুমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্প। এর ব্যয় প্রায় এক হাজার ৯২১ কোটি টাকা।

>> শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও ৫০০ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সিরাজগঞ্জ স্থাপন প্রকল্প। এর ব্যয় ৮৮৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

>> বিদ্যমান ১২টি ক্যাডেট কলেজের অবকাঠামোগত সুবিধাদি সম্প্রসারণ প্রকল্প। এর ব্যয় ৪২৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

>> পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন (কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলা) প্রকল্প। এর ব্যয় ৭৬৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

>> নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৫নং গুদারাঘাটের নিকট শীতলক্ষ্যা নদীর উপর কদমরসুল ব্রীজ নির্মাণ প্রকল্প। এর ব্যয় ৫৯০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

>> চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সড়ক কাম বেড়ি বাধঁ প্রতিরক্ষা এবং নিস্কাশন প্রকল্প। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৫৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রকল্পগুলোতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৫ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ১১ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা যোগান পাওয়া যাবে।