বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণে বছরে ক্ষতি ৬৫০ কোটি ডলার: বিশ্ব ব্যাংক  

বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি ও মৃত্যু ঝুঁকির তথ্যসহ বাংলাদেশকে একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যেতে হলে এখনই বিশেষ করে শহর এলাকায় পরিবেশগত অবনতি ও দূষণ রোধে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2018, 06:23 PM
Updated : 16 Sept 2018, 06:27 PM

রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংকের ‘এনহেন্সিং অপারচুনিটিস ফর ক্লিন অ্যান্ড রিজিলিয়েন্ট গ্রোথ ইন আরবান বাংলাদেশ : কান্ট্রি এনভায়রনমেন্টাল এনালাইসিস ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে  বলা হয়, “বাংলাদেশে প্রতিবছর শুধু শহরগুলোতে পরিবেশ দূষণের কারণে ৬৫০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়। এই ক্ষতি ২০১৫ সালের জিডিপির তিন দশমিক চার শতাংশ।

“শহরে পরিবেশ দূষণ জনিত রোগে বছরে ৮০ হাজার মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশে বছরে ২৮ শতাংশ মৃত্যু পরিবেশ দূষণজনিত কারণে হয়ে থাকে। যেখানে পরিবেশ দূষণে মৃত্যুর বৈশ্বিক হার মাত্র ১৬ শতাংশ।”

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

বিশ্ব ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরিবেশ বিশেষজ্ঞ সুইকো ইয়োশিজিমা, নাদিয়া শারমিন এবং লিনে ফ্যারেল এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

লক্ষ্য অর্জনে নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়,  “এছাড়াও দেশে সবুজ অর্থায়ন, পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তির প্রসার, বিপজ্জনক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নতকরণ এবং পরিবেশগত সুরক্ষার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।”

বড় ও ছোট উভয় ধরনের নগরের ওপর অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের প্রভাবও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।

বিগত ৪০ বছরে ঢাকা প্রায় ৭৫ শতাংশ জলাভূমি হারিয়েছে। জলাভূমি ভরাট এবং বালি ভরাট করে বিভিন্ন এলাকার বহুতল বাড়ি বানানোর কারণে নগরের বিভিন্ন অংশ বন্যার সময় প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ছোট ছোট নগরগুলো পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছে।

যেমন, ১৯৯০ সাল থেকে পাবনা তার অর্ধেক জলাভূমি হারিয়েছে এবং এর ইছামতি নদী মৃতপ্রায় অবস্থায় রয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “বিগত এক দশকে বাংলাদেশের নীতি ও আইনগত কাঠামোর উন্নতি করেছে। বিশেষ করে পরিবেশ সংরক্ষণে আমরা অনেক কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি।

“আমরা ইটের ভাটা এবং অন্যান্য দূষণকারী শিল্পগুলোতে দূষণমুক্ত প্রযুক্তি চালু করেছি এবং প্রধান নগরগুলোতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বায়ুর গুণমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছি।”

তিনি বলেন, “সম্প্রতি আমাদের সরকার পরিবেশ আইন তৈরি করেছে। এটি এখন ভেটিংয়ের অপেক্ষায় আছে। এরপর এ আইনটি চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে।”
অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক পরিচালক রাজশ্রী পারালকার বলেন, “নগর এলাকায় পরিবেশ অবনতি ও দূষণের কারণে বাংলাদেশকে অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে। সবুজ প্রবৃদ্ধির জন্য সঠিক নীতি ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান থাকা এবং শিল্পকারখানায় পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এখনই পদক্ষেপ থাকা দরকার।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, জলাভূমি দখল ও বিপজ্জনক বর্জ্য যত্রতত্র স্থানে ফেলে দেওয়ার কারণে পরিবেশের অবনতি হচ্ছে। এর ফলে নারী, শিশু এবং দরিদ্রদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। শহরাঞ্চলের প্রায় ১০ লাখ মানুষ, যাদের বেশির ভাগই দরিদ্র জনগোষ্ঠী সীসা দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে।

এ কারণে বিশেষ করে শিশুদের বুদ্ধিবিকাশে (আইকিউ) ও স্নায়বিক ক্ষতি হতে পারে এবং গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের সময় ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। বৃহত্তর ঢাকায়, ভারী ধাতব দূষিত স্থানগুলোর অধিকাংশই দরিদ্র এলাকাগুলোতে অবস্থিত।

প্রতিবেদনে তিনটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে- পরিবেশগত অবনতির মূল্য, পরিচ্ছন্ন ও টেকসই শহর এবং পরিচ্ছন্ন শিল্প প্রসারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ।

অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংকের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ক প্র্যাকটিস ম্যানেজার কেসেনিয়া লভভস্কি বলেন, “এটা করা সম্ভব। আমরা মাধবদীতে পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার সাফল্য দেখেছি। সেখানে দেখা গেছে, নগর পরিকল্পনায় স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ, সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি এবং দৃঢ় মনোবলের স্থানীয় নেতৃত্ব অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও দূষণের ধারা পাল্টে দিতে পারে।”