চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথ চালুর প্রস্তাব যাচ্ছে একনেকে

পাঁচ দশক আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি সীমান্ত দিয়ে ভারতের সঙ্গে রেল সংযোগটি ফের সচল করার উদোগ নিয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2018, 02:47 PM
Updated : 16 Sept 2018, 02:47 PM

এজন্য ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ভারতের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে চিলাহাটি এবং চিলাহাটি বর্ডারের মধ্যে রেলপথ নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

প্রকল্পটি আগামী মঙ্গলবার চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের পরিত্যক্ত বিভিন্ন রেলসংযোগ পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, নতুন এ সংযোগের জন্য বাংলাদেশকে চিলাহাটি থেকে ভারতের সীমান্ত পর্যন্ত সাত কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করতে হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। পুরো অর্থই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দিয়ে ২০২১ সালের জানুয়ারির মধ্যে এ প্রকল্পটি শেষ করতে চায় সরকার।

ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারতের হলদিবাড়ি অংশে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার রেলপথ ভারতের অর্থায়নে নির্মাণ করা হবে।

এর আগে ঢাকা-কলকাতা ও খুলনা-কলকাতা রুটে রেল চলাচল শুরু হয়েছে। এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোহনপুর থেকে ভারতের মালদার সিংহাবাদ, দিনাজপুরের বিরল থেকে উত্তর দিনাজপুরের রাধিকাপুর, কুষ্টিয়ার দর্শনা থেকে নদিয়ার গেদে এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে আসামের করিমগঞ্জের মহিষাশন পর্যন্ত রেল সংযোগ চালুর প্রকল্প চলমান আছে।

চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথের প্রকল্প প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, ভারতের অংশে পরিত্যক্ত মিটারগেজ রেলপথ ব্রডগেজে রূপান্তর করা হবে। উভয় পাশে রেলপথ নির্মাণ শেষ হলে চিলাহাটি থেকে হলদিবাড়ি স্টেশন হয়ে ভুটানের সীমান্তবর্তী জলপাইগুড়ির হাসিমারা স্টেশন পর্যন্ত ট্রেন চালু করা যাবে।

একইভাবে হলদিবাড়ি থেকে নেপালের সীমান্তবর্তী বিহার রাজ্যের জগবানি স্টেশন পর্যন্তও ট্রেন চালু করা যাবে। ওই দুই স্টেশন থেকে সড়কপথে ভুটান ও নেপালে পণ্য পরিবহন করা যাবে।

১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগে চিলাহাটি থেকে হলদিবাড়ি পর্যন্ত রেল যোগাযোগ ছিল। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে তা বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৭৪ থেকে ১৮৭৯ সালের মধ্যে সাড়া থেকে (পাকশীর কাছে) চিলাহাটি পর্যন্ত মিটারগেজ এবং দামুকদিয়া (সাড়ার উল্টো দিকে) থেকে পোড়াদহ পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হয়।

১৯০৯ সালে পোড়াদহ থেকে ভেড়ামারা পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইনকে ডাবল লাইনে রূপান্তর করা হয়। ১৯১৫ সালের জানুয়ারিতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ চালুর মধ্যে দিয়ে দর্শনা থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত সরাসরি রেল সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৪ সালে সান্তাহার থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত এবং ১৯২৬ সালে পার্বতীপুর থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত মিটারগেজ রেললাইন ব্রডগেজে রূপান্তর করা হয়।

ওই সময় শিয়ালদহ ও শিলিগুড়ির মধ্যে সান্তাহার-পার্বতীপুর হয়ে দার্জিলিং এক্সপ্রেস ও নর্থবেঙ্গল এক্সপ্রেস নামে দ্রুতগতির ট্রেন চালু হয়। রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ রুট খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হত।

আন্তঃআঞ্চলিক যোগাযোগ জোরদার করার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন খাতের উন্নয়ন সহজ করতে দুই দেশের মধ্যে সাতটি রেলপথের মধ্যে তিনটিতে সংযোগ চালু হয়েছে। ২০১৫ সালের মে মাসে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের রেল সংযোগ সংক্রান্ত এক বৈঠকে চিলাহাটি ও হলদিবাড়ির মধ্যে রেললাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়।