পদ্মাসেতু ও পায়রা বন্দরের নির্মাণযজ্ঞ দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্নভাবে চালাতে সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন বলেও মনে করেন বাংলাদেশে ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে পটুয়াখালী জার্নালিস্ট ফোরাম-ঢাকা আয়োজিত পটুয়াখালী উৎসবে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি।
আতিউর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ এখন ব্যাপক উত্থান পর্বে রয়েছে। বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দিন বদলের পরিকল্পনা এখন অনেকখানি দৃশ্যমান। এই পরিস্থিতিতে রপ্তানির জন্য নতুন নতুন বাজার খোঁজা প্রয়োজন। সরকার এখন সেই কাজটি গুরুত্বের সাথে করে যাচ্ছে।”
দক্ষিণাঞ্চলের দিকে সরকারের বিশেষ নজর আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু ও পায়রা বন্দরকে ঘিরে অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে তা অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এই দুটি প্রকল্পের কারণে জিডিপিতে অতিরিক্ত এক দশমিক দুই শতাংশ যোগ হবে।
অবকাঠামোগত উন্নয়নকে দক্ষিণাঞ্চলের বাণিজ্যিক প্রসারের প্রধান প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পায়রা বন্দরের বিশেষ গুরুত্ব এখানেই। এটি দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি অবকাঠামো হবে। এখানে নদীর গভীরতা রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে অনেক বেশি। জাহাজ বন্দরে আসার জন্য জোয়ার ভাটার অপেক্ষায় থাকতে হবেনা।
“২০২৩ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর পায়রা হবে আন্তর্জাতিক মানের সমুদ্র বন্দর। শুধু এই একটি প্রকল্পের কারণেই এফডিআই বা বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। বাস্তবায়নাধীন একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিনিয়োগেও ভূমিকা রাখবে পায়রা।”
এই বন্দরের কারণে পটুয়াখালীর পর্যটন শিল্পের আরও উত্থান ঘটবে বলে আশা করে আতিউর বলেন, সেজন্য ওই অঞ্চলের হোটেল, মোটেল, রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগকারীদেরও এজন্য এগিয়ে আসতে হবে।
দিন বদলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকার গত ১০ বছরে দৃশ্যমান উন্নয়ন করতে পেরেছে দাবি করেন এই অর্থনীতিবিদ। সেজন্য সরকারের ধারাবাহিকতা থাকা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
“১৯৭২ সালে যেখানে আমাদের মোট অর্থনীতির আকার ছিল ৮ বিলিয়ন ডলার সেটা এখন ২৮৫ বিলিয়ন ডলারে দাড়িয়েছে। এর সিংহভাগই হয়েছে গত ১০ বছরে। কারণ ২০০৬ সালে ৭১ বিলিয়ন ডলার থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে বেড়েছিল মাত্র ২০ বিলিয়ন ডলার (৯১ বিলিয়ন ডলার)। বাকি ব্যাপ্তিটা হয়েছে গত ১০ বছরে।”
অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, শক্তিশালী ও কার্যকর সমুদ্র বন্দর ছাড়া কোনো দেশ অর্থনীতিতে উন্নতি করতে পারে না। সিঙ্গাপুর, হংকং, জাপান এর উদাহরণ। পটুয়াখালীতে পায়রা বন্দর নির্মাণ করা গেলে তা দেশের অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেবে। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে অনেক কার্যকর হবে এই বন্দর।
সংগঠনটির আরেক সাবেক সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেন, “শুধু এক চট্টগ্রাম বন্দরের কারণেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এতো সাফল্য এসেছে। পদ্মাসেতু নির্মাণ হয়ে যাওয়ার পর পায়রা বন্দর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। শুধু বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য নয়, বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও বেস্ট ডেস্টিনেশন হবে পটুয়াখালী।”
অনুষ্ঠানে পটুয়াখালীর শিল্পপতি আজমত গ্রুপের চেয়ারম্যান আতাহার উদ্দিন, পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ এবং ঢাকা ও পটুয়াখালীতে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক বক্তব্য রাখেন।