বিদ্যুতে ভর্তুকি চিরদিন থাকবে না: প্রধানমন্ত্রী

উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা তুলে ধরে অপচয় বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2018, 09:50 AM
Updated : 6 Sept 2018, 11:06 AM

বৃহস্পতিবার বসুন্ধরার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, “বর্তমানে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের খরচ হচ্ছে ৬ টাকা ২৫ পয়সা। কিন্তু আমরা বিক্রি করছি ৪ টাকা ৮২ পয়সায়। অর্থাৎ, আমরা এখানে ভর্তুকি দিচ্ছি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে খরচ সেটা কিন্তু আমরা গ্রাহকের কাছ থেকে নিচ্ছি না।”

কিন্তু এক সময় এ সুযোগ আর থাকবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার মনে হয় আর্থ-সামাজিক উন্নতি যখন হবে, তখন যতটা খরচ ততটাই দিতে হবে। আমার একটা অনুরোধ থাকবে, বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করার জন্য আমি অনুরোধ জানাই।”

বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে বৃহস্পতিবার ‘বিদ্যুৎ-জ্বালানি সপ্তাহ ২০১৮’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে গত প্রায় ১০ বছরে দেশের বিদ্যুৎ খাতে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং যেসব সাফল্য এসেছে তার বিস্তারিত অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ছিল ‘অত্যন্ত শোচনীয়’। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল তিন হাজার মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার মেগাওয়াটে।

গত সাড়ে নয় বছরে মোট ২৪ হাজার ৩৫১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৩৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য চুক্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে এবং প্রায় ১২ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে।

বর্তমান সরকারের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে যেখানে দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪৭ শতাংশ বিদ্যুৎ সুবিধা পেত, সেখানে গত সাড়ে ৯ বছরে তা ৯০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ সালে যেখানে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮ লাখ, তা এখন ৩ কোটির বেশি। 

বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে বৃহস্পতিবার ‘বিদ্যুৎ-জ্বালানি সপ্তাহ ২০১৮’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নতির দিকগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত সাড়ে নয় বছরে জ্বালানির বহুমুখীকরণ, সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন সম্প্রসারণ, মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি হয়েছে; সিস্টেম লস কমে এসেছে।

“১ লাখ ৩০ হাজার নতুন সেচ সংযোগের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব এবং সারাদেশে ৫৩ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করার মাধ্যমে প্রায় ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার সম্ভব হচ্ছে।”

ভারত থেকে বর্তমানে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, সেখান থেকে আরো বিদ্যুৎ আমদানির আলোচনা চলছে। ভুটান ও নেপাল থেকেও বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

বিদ্যুতের পাশাপাশি জ্বালানি নিরাপত্তার কথাও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন। তিনি জানান, গত সাড়ে নয় বছরে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো ছাড়াও মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ভাসমান ও স্থলে আরও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ সরকার নিচ্ছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এমন ব্যবস্থা করে যেতে চান, যেন তারা সুন্দর জীবন-যাপন করতে পারে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অবদানের জন্য এ অনুষ্ঠানে ১২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সন্মাননা দেন প্রধানমন্ত্রী।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে নেপালের জ্বালানি, পানিসম্পদ ও সেচমন্ত্রী বর্ষা মান পুন অনন্ত, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বক্তব্য দেন।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারের সাফল্য আর অর্জনের কথা তুলে ধরতে প্রতি বছরের মতো এবারও দেশব্যাপী বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। এবারের শ্লোগান ঠিক করা হয়েছে ‘অনির্বান আগামী’।

এ আয়োজনের অংশ হিসেবে সেরা কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেওয়ার পাশাপাশি দেশব্যাপী স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তৃতা ও রচনা প্রতিযোগিতা, বিদ্যুৎ জ্বলানি বিষয়ক প্রতিবেদনের জন্য সাংবাদিকদের পুরস্কার দেওয়াসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন ৩৫টি এবং জ্বালানি বিভাগের আওতাধীন ২৬টি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও দেশি-বিদেশি ৭০টির বেশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবারের আয়োজনে অংশ নিচ্ছে।