ঈদের পর রেমিটেন্সে ধীরগতি

ঈদের পর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে ধীরগতি দেখা দিয়েছে।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2018, 04:25 PM
Updated : 3 Sept 2018, 04:25 PM

১৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি নিয়ে গত অর্থবছর শেষ হলেও চলতি অর্থবছরে সেটা ধরে রাখা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত অর্থনীতিবিদরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, কোরবানির ঈদের ছুটির আগে বেশ ভালোই রেমিটেন্স এসেছিল। কিন্তু ঈদের কয়েক দিনের ছুটি এবং ঈদ শেষে মাসের বাকি দিনগুলোতে তেমন রেমিটেন্স পাঠাননি প্রবাসীরা।

সে কারণে অগাস্ট মাসে রেমিটেন্স প্রবাহে কিছুটা ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে অর্থবছরের দুই মাসের হিসাবে রেমিটেন্স প্রায় ৮ শতাংশ বেড়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার রেমিটেন্স সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস অগাস্টে ১৪১ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত বছরের অগাস্ট মাসের চেয়ে দশমিক ৫৩ শতাংশ কম।

তবে অর্থবছরের প্রথম মাসের চেয়ে অর্থাৎ জুলাই মাসের চেয়ে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।

অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে অর্থাৎ জুলাই-অগাস্ট সময়ে ২৭২ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৫৩ কোটি ৪১ লাখ ডলারের রেমিটন্স এসেছিল বাংলাদেশে।

গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় ‘সুখবর’ নিয়ে শুরু হয়েছিল নতুন অর্থবছর।

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৩১ কোটি ৭০ লাখ (১.৩১ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা,

যা ছিল গত বছরের একই মাসের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি।

২০১৫-১৬ অর্থবছরের খরা কাটিয়ে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে গত অর্থবছর শেষ করে বাংলাদেশ।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিটেন্সের নিম্নগতি সরকারের নীতি-নির্ধারকদের কপালে ভাঁজ ফেলেছিল। রেমিটেন্স বাড়াতে মাশুল না নেওয়াসহ নানা ঘোষণাও দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

কিন্তু এখন পর‌্যন্ত মাশুল কমানোর অর্থমন্ত্রীর সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন হয়নি।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অর্থবছরের প্রথম মাসে রেমিটেন্সে ভালো প্রবৃদ্ধি হলেও সেটা ধরে রাখা সম্ভব হবে কিনা সেটা নিয়ে সংশয় আছে।

 “আমার বিশ্লেষণ হচ্ছে, গত অর্থবছরের ইতিবাচক ধারা নাও থাকতে পারে। সে কারণে রেমিটেন্স বৃদ্ধির ধারা ধরে রাখতে হলে যেসব ভাই-বোনদের আমরা বিভিন্ন দেশে পাঠাচ্ছি তাদের অবশ্যই দক্ষ করে পাঠাতে হবে।

“আর আরেকটি হচ্ছে, তারা যাতে কোনো ঝামেলা ছাড়া কম খরচে দ্রুত টাকা দেশে পাঠাতে পারেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২২ অগাস্ট কোরবানি ঈদের পর তেমন রেমিটেন্স দেশে আসেনি। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ঈদ হয়েছিল। সে কারণে প্রবাসীরা তাদের পরিবার-পরেজনের কাছে অগাস্ট মাসজুড়েই রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন।

যার ফলে গত বছরের অগাস্ট মাসে ১৪১ কোটি ৮৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। এবার ঈদ আগে হওয়ায় পরও প্রায় সমান রেমিটেন্স এসেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি, স্থানীয় বাজারে ডলারের তেজিভাব এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে রেমিটেন্স বেড়েছে।

প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে বাংলাদেশে অর্থনীতিতে।

বাংলাদেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখে প্রবাসীদের পাঠানো এই বিদেশি মুদ্রা। 

বর্তমানে এক কোটির বেশি প্রবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন।

দেশের রেমিটেন্সের অর্ধেকের বেশি আসে মধ্যপ্রাচ্যের ছয় দেশ- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত ও বাহরাইন থেকে।

রেমিটেন্স বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও রয়েছে সন্তোষজনক অবস্থায়। সোমবার দিন শেষে রিজার্ভে ছিল ৩২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় গত কয়েক মাস ধরে ডলারের দর স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে ডলারের চাহিদা কমে আসায় বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছে কোন ডলার বিক্রি করেনি।

চাহিদা বাড়ায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৩০ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) বিক্রি করে ১১ কোটি ডলার। 

সোমবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজারে প্রতি ডলার ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। তিন মাস আগেও ডলারের দর একই ছিল।

অথচ এক বছর আগে এই দর ছিল ৮০ টাকা ৫৯ পয়সা। এ হিসাবে এক বছরে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ।