নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস বছরের শেষ নাগাদ: প্রতিমন্ত্রী

এই বছরের শেষ নাগাদ নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ; গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়লেও তা সহনীয় পর্যায়ে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2018, 02:31 PM
Updated : 8 August 2018, 02:31 PM

বুধবার মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমাদের এক্সপার্টরা কাজ করছেন। আমি আশা করি, এই বছরের মধ্যে আমরা নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানির ক্ষেত্রে একটা ভালো জায়গায় পৌঁছবো।

 “ভোক্তা মূল্যের ক্ষেত্রে একটা কমফোর্ট জোন তৈরি হবে। আমি বলছি না দাম কী পরিমাণ দাম হবে। আমি বলছি, অস্বাভাবিক দামের দিকে গ্রাহকরা যাবেন, সেটা আমরা হতে দেব না।”

দেশে বেশ কয়েকটি নতুন কূপ আবিষ্কার হলেও সেখান থেকে আশানুরূপ উৎপাদন না হওয়ায় গ্যাসের সঙ্কট বেড়েই চলেছে। বর্তমানে দৈনিক ২৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হলেও সরকারের হিসাবে চাহিদা এর চেয়ে অন্তত আরও এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বেশি।

বাপেক্স ১০৮টি ব্লকে ড্রিলিং করার উদ্যোগ নিলেও ৮টি সম্পন্ন হয়েছে। সেখান থেকে গ্যাস তোলা হচ্ছে সামান্য।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এখন যে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে, তা মাটির তিন হাজার মিটারের নিচে। বাপেক্সের সে সক্ষমতা নেই। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কন্ট্রাকটর আমাদের নিতে হবে।”

দেশের বর্তমানে গ্যাসের যে চাহিদা তা পূরণ করলে নতুন করে আরও চাহিদা সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন নসরুল হামিদ।

একই সঙ্গে বিদ্যুতের মাস্টারপ্ল্যানে ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেটাওয়াট উৎপাদন পরিকল্পনার মধ্যে ৪০ শতাংশ রয়েছে এলএনজি নির্ভর। তখন চাহিদা বাড়বে আরও বেশি।

এই চাহিদা পূরণে দেশীয় নতুন গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধানের পাশাপাশি আমদানির কাজও চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।

নসরুল হামিদ জানান, মহেশখালীতে দেশের প্রথম ভাসমান এলএনজি টার্মিনালে থেকে খুব শিগগিরই আমদানি করা এলএনজি সরবরাহ শুরু হবে।

“বৈরী আবহাওয়া, পাইপলাইনের কারণে এলএনজি আনতে পারছিলাম না। জ্বালানি দিবসের (৯ অগাস্ট) পরবর্তী সময়ে এলএনজি সঞ্চালন শুরু হবে বলে আশা করছি।

“এলএনজি আসার পর কয়েকজন মাস আমরা দেখব বাজার কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়। আশা করছি, এ বছরের শেষে আমরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দিতে পারব।”

এলএনজি আমদানিকে কেন্দ্র করে সরকারি কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে পাইকারি পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর উপর গণশুনানিও হয়েছে।

গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে কি না- জানতে চাওয়া হলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমাদের ক্যালকুলেশন অনুযায়ী প্রস্তাব দিয়েছি। শুনানি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।

“আমার মনে হয় না বিইআরসি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন, যেটা হঠকারি সিদ্ধান্ত হবে। আমি মনে করি ভবিষ্যতে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম কমফোর্ট অবস্থায় থাকবে।”

নসরুল হামিদ বলেন,  দেশীয় কোম্পানি বাপেক্সের পাশাপাশি বিদেশি কোম্পানি গ্যাস অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। গভীর সমুদ্রের একটি ব্লকে টু ডি জরিপে দেউয়ু গ্যাস পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

“দেইয়ু এসেছে। তারা ভাল কাজ করছে। আশা করছি শিগগিরই এখান থেকে ভাল রেজাল্ট পেয়ে যাবে।”

তবে গভীর সমুদ্রে গ্যাস পাওয়া গেলেও তা উত্তোলন করে পাইপলাইন করে ভূমিতে আনতে সময় লেগে যাবে বলে জানান তিনি।

তাই নিজেদের গ্যাসের পাশাপাশি আমদানি করা গ্যাস দিয়ে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

এদিকে আবাসিক খাতেও আমদানি করা এলপিজি দিয়ে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

দেশের মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে পাইপলাইনে আবাসিকে গ্যাসের গ্রাহক সংখ্যা ৩৫ লাখ।

তবে দেশের ৭০ শতাংশ জনগণের দৌরগোড়ায় এলপিজি পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কোম্পানি অনুমোদন দেয়া হয়েছে জানিয়ে নসরুল বলেন, কোম্পানিগুলোর মধ্যে তারা বাজার প্রতিযোগিতা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন; যাতে গ্রাহকরা ন্যায্য মূল্যে গ্যাস পায়।

এদিকে সাম্প্রতিক বড়পুকুরিয়া কয়লা কেলেঙ্কারির বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চলছে। কিছুদিনের মধ্যেই তাদের প্রতিবেদন আমরা পাবো।

“আমরা কোনো জায়গায়, কোনোভাবে, কোনো গাফিলতিকে প্রশ্রয় দেব না। কোনো দুর্নীতিকে আমরা প্রশ্রয় দেব না। দুর্নীতিমুক্ত জ্বালানি ব্যবস্থা আমরা আগামীতে তৈরি করতে চাই।”

কোনো ‘ব্যক্তিবিশেষের দুর্নীতির দায়ও সরকার নেবে না’ বলে সাফ জানিয়ে দেন নসরুল হামিদ।

এদিকে মধ্যপাড়া গ্রানাইট খনিতে ৫৫ কোটি টাকার তিন কোটি ৫৯ লাখ টন পাথর ‘মাটিতে দেবে’ যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের হাতে আসেনি।

৯ অগাস্ট জ্বালানি দিবস উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। জ্বালানি দিবসকে কেন্দ্র করে নানা সেমিনার, প্রচার ও জ্বালানি নিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয় জনগণের সামনে তুলে ধরার আয়োজন করা হয়েছে।