ভোটের আগে ‘সংযত’ মুদ্রানীতি

বছরের প্রথমার্ধে লক্ষ্যের চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ হওয়ায় ভোটের আগে ‘সংযত’ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2018, 10:11 AM
Updated : 31 July 2018, 02:53 PM

জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের নতুন এই মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি জানুয়ারি-জুলাই মেয়াদের মুদ্রানীতির মতোই ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়েছে।

আর সামগ্রিকভাবে অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ, যা জানুয়ারি-জুলাই মেয়াদের মুদ্রানীতির প্রক্ষেপণের ১৫ দশমিক ৮ শতাংশের চেয়ে বেশি।

মঙ্গলবার মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে গভর্নর ফজলে কবির এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বলেন, “আগের ধারাবাহিকতায় প্রবৃদ্ধিবান্ধব এবং একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি পরিমিত রাখার লক্ষ্যে সংযত ধরনের মুদ্রানীতি ঘোষণা হয়েছে।”

গভর্নর বলেন, নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ, সরকারি খাতে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ।

এক প্রশ্নের উত্তরে ফজলে কবির বলে, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি যদিও গতবারের মুদ্রানীতির মত ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়েছে, কিন্তু সরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের চাহিদা কম থাকায় বেসরকারি খাতে ঋণের উচ্চতর প্রবৃদ্ধি হওয়ার সুযোগ থাকবে।

মুদ্রানীতিতে বিধিবদ্ধ জমার (কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নগদ জমা রাখার হার) অনুপাত  বা সিআরআর এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তহবিল আহরণের রেপো সুদের হারও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

বর্তমানে সিআরআর আছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। রেপো সুদের হার ৬ শতাংশ। ব্যাংকগুলোর অর্থ সংকট কাটাতে গত এপ্রিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত সিআরআর ও রেপোর হার কমিয়ে আনে। 

গভর্নর বলেন, আগের মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, তা অর্জিত হয়নি। এ বছরের জুনে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

“এ জন্যই মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে।”

ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাবাচন সামনে রেখে সংযত মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে কিনা- এ প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান বলেন, সরকার বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্য ধরেছে, তা বাস্তবায়নে সহায়তা করতেই নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে।

গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুলাই) মুদ্রানীতিতে তা বাড়িয়ে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়।

অর্থবছর শেষে দেখা যায়, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

গত অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আর গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে আটকে রাখার আশা করা করা হয়েছিল।

অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস।

আর পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) জুন মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

সরকার চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ; আর গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখার আশা করছে।

অর্থপাচার বন্ধে নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান বলেন, “অর্থপাচার এখন অনেক কমে গেছে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে এরইমধ্যে চার হাজার কোটি টাকা পাচার সংক্রান্ত তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়েছি।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া টাকার মধ্যে কতটা ফেরত এসেছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে গভর্নর বলেন, “৮১ মিলিয়ন ডলার আটকে ছিল, সেখান থেকে এরই মধ্যে ১৫ মিলিয়ন ফিলিপাইনের আদালতের আদেশে ফেরত এসেছে। বাকি ৬৬ মিলিয়ন ফেরত আনা নিয়ে ফিলিপাইনের উচ্চ আলাদতে মামলা চলছে।”

বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের ঘোষিত আর্থিক নীতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে প্রতি অর্থবছরে দুটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বরাবরের মতো এবারও নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা এস কে সুর চৌধুরী, ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান, আহমেদ জামালসহ প্রধান অর্থনীতিবিদ ফয়সাল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।