বড়পুকুরিয়ার জন্য কয়লা আমদানি হচ্ছে

খনি থেকে সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি সচল করতে কয়লা আমদানি করতে যাচ্ছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2018, 09:28 AM
Updated : 28 July 2018, 09:29 AM

শনিবার বিদ্যুৎ ভবনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন বিদ্যুৎ সচিব আহমদ কায়কাউস। 

তিনি বলেন, “প্রয়োজনবোধে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আমরা কয়লা আমদানি করে রাখার পরিকল্পনা করছি।”

আমদানির বিষয়টি পর্যালোচনা করতে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানান সচিব।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়লার উপর ভিত্তি করে চলছিল ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।

খনি থেকে কয়লা সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোববার রাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সবকটি ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সঙ্কট চলছে উত্তরাঞ্চলে। সিরাজগঞ্জের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে সেখানে সরবরাহ বাড়ালেও সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যায়নি।

সচিব বলেন, “ঈদের সময়ে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ রাখতে চার/পাঁচদিন বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখার মতো কয়লা রেখেই আমরা উৎপাদন বন্ধ করেছিলাম।”

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানান, শুক্রবার থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ১০০ টান করে কয়লা সরবরাহ শুরু করেছে খনি কর্তৃপক্ষ।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালাতে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন কয়লা দরকার।

খনির নতুন ফেজ থেকে পুরোদমে কয়লা উত্তোলন শুরু হতে এক থেকে দেড়মাস লেগে যাবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তখন থেকে কয়লা পাওয়া যাবে। 

আমদানির পরিকল্পনা করলেও বড়পুকুরিয়ার মতো মানের কয়লা স্বল্প সময়ের মধ্যে জোগাড় করাও চ্যালেঞ্জে হিসেবে দেখা দিয়েছে।

বিদ্যুৎ সচিব বলেন, “বড় পুকুরিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ীই আমরা কয়লা আনবো।

প্রাথমিকভাবে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোকে লক্ষ্য রেখে সেখানে যোগাযোগ করা হয়েছে।”

তবে কতদিনের মধ্যে কয়লা আনা যাবে, তা জানাতে পারেননি তিনি।

বড়পুকুরিয়া খনির এই কয়লা ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎকেন্দ্রে

বিশ্বের যেসব খনিতে উন্নতমানের কয়লা পাওয়া যায় তার মধ্যে দিনাজপুরে বড়পুকুরিয়া অন্যতম। এই কয়লায় সালফার রয়েছে দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং ছাইয়ের পরিমাণ ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। এছাড়া ক্যালোরিফিক ভ্যালু (কতটা তাপ তৈরি করে) ছয় হাজারের বেশি।

উন্নত মানের এই কয়লা কোথা থেকে আনা হবে- জানতে চাওয়া হলে সচিব বলেন, “যেখান থেকেই আনি আমরা স্পেসিফিকেশনে একটু ছাড় দেব না। স্পেসিফিকশনে ছাড় দিলে আমরা ভারতের ধামরা থেকে খুব তাড়াতাড়ি কয়লা নিয়ে আসতে পারতাম।”

এদিকে ২৩০ কোটি টাকা মূল্যের ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ মেট্রিক টন কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় বড় পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ১৯ জনকে আসামি করে দুর্নীতি দমন আইনে অভিযোগ দায়ের করেছে খনি কর্তৃপক্ষ।

কয়লা কেলেঙ্কারির তদন্তের বিষয়ে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা তৌফিক ইলাহী বলেন, “আমার মনে হয় আপনারা ধৈর্য ধরে থাকেন। সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটার উপর নির্দেশ দিয়েছেন।

“একটু ধৈর্য ধরেন। বিদ্যুতের কোনো বড় অব্যবস্থাপনা না। ভোল্টেজে একটু সমস্যা হতে পারে।”

রংপুর অঞ্চলের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি যতটা খারাপ ভাবা হচ্ছে ততটা খারাপ নয় বলে দাবি করেন আহমদ কায়কাউস।

তিনি বলেন, “পিক আওয়ারে সামান্য বিভ্রাট হচ্ছে, এক থেকে দেড় ঘণ্টা। সেটা আমরা সামলিয়ে ফেলেছি ইনশাল্লাহ। ওই রিজিওনে ভোল্টেজে একটু সমস্যা হচ্ছে।”

রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রতিদিন ৬৫০ মেগওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। এর বেশিরভাগই আসত বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে।

এর বাইরে রংপুর ও সৈয়দপুরে ২০ মেগাওয়াট করে ৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তেলভিত্তিক দুটি ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে।

পাশাপাশি সিরাজগঞ্জের কেন্দ্রগুলো থেকে রংপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়িয়ে সেখানকার পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সচিব বলেন, “তীব্র গরম পড়লে পিক আওয়ারে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সমস্যা হচ্ছে। গরম তীব্র না হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিকই থাকছে।”

শনিবার সকালে বিদ্যুৎ ভবনে ‘বিদ্যুৎ খাতের প্রশিক্ষণ নীতিমালা চূড়ান্তকরণের’ এর উপর কর্মশালা এবং ‘নেট মিটারিং নির্দেশিকা ২০১৮’ – এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী ও সচিব।