সোনা নিয়ে পদক্ষেপে অর্থমন্ত্রীর ফেরার অপেক্ষা

যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থমন্ত্রী ফেরার ‘পরদিনই’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে সোনায় ‘গোলমাল’ নিয়ে ‘ব্রিফ’ করে পরবর্তী পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2018, 05:34 PM
Updated : 22 July 2018, 05:34 PM

রোববার রাতে আবুল মাল আবদুল মুহিতের দেশে ফেরার কথা রয়েছে উল্লেখ করে সোমবারই তারা আলোচনার বসতে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্সে রোববার এক আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা শীর্ষ পর্যায় থেকে আমাকে আশ্বস্ত করেছে, ব্যাংকে রক্ষিত আমাদের সম্পদ সব ঠিক আছে। তবে একটা কথা যেহেতু উঠেছে, এটাকে আমরা পর্যালোচনা করব, দেখব।

“আজকে (রোববার) বোধহয় অর্থমন্ত্রী দেশে আসবেন...কাল তার সাথে বসে ব্রিফ করব...ব্রিফ করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে।” 

অর্থমন্ত্রী ১৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ‘গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর ইফেক্টিভ ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন’ শিরোনামে এক আন্তর্জাতিক কর্মশালায় যোগ দিতে ঢাকা ত্যাগ করেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে রাখা সোনা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠার প্রেক্ষাপটে মান্নান বলেন, “যদি কেঁচো খুঁড়তে যেয়ে সাপ বের হয়, আমরা ডিল করব।

“আমরা নিজের ধারণা এটাকে আরও পর্যালোচনা করা উচিত, এরপর তদন্ত হবে কি না তা পর্যালোচনার পর বের হয়ে আসবে।”

টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) আয়োজনে এই আলোচনা সভা শেষে এ মন্তব্য করেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল।

ভল্টে সোনা হেরফের প্রসঙ্গে ডেপুটি গভর্নর সাংবাদিকদের বলেন, “অর্থমন্ত্রী এটাকে পর্যালোচনা করে দেখবেন, কোনও দোষ আছে কি না দেখা হবে, যদি দোষ খুঁজে পাওয়া যায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে ভল্টে রক্ষিত সোনায় কোনো হেরফের হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, “সোনা যদি আপনি সরাতে চান তাহলে সোনার বদলে সোনা রাখবেন না, অন্য কিছু রাখবেন। ২২ বদলিয়ে ১৮ রাখবেন না। তারপরও পুরো বিষয়টি তদন্ত করা হবে।”

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক অনুসন্ধানের তথ্যের ভিত্তিতে দৈনিক প্রথম আলোতে মঙ্গলবার প্রকাশিত এক সংবাদ প্রতিবেদনে ভল্টের সোনা নিয়ে অভিযোগটি সামনে আসে।

‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড’ শিরোনামে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের ৯৬৩ কেজি সোনা পরীক্ষা করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনিয়ম ধরা পড়েছে।

জমা দেওয়ার সময় যা ৮০ শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা হিসেবে গ্রহণ করে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, দুই বছর পর তা পরীক্ষা করে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ সোনা পাওয়া গেছে। আর ২২ ক্যারেটের সোনা হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক বছরের বেশি সময় অনুসন্ধান করে তারা ওই অনিয়ম পেয়েছেন। বিষয়টি এনবিআরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে, যাতে তারা অনিয়মে জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারে।”

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখা সোনায় অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক রবিউল হোসেন এবং ভল্টের দায়িত্বে থাকা কারেন্সি অফিসার আওলাদ হোসেন চৌধুরী দাবি করেন, ভল্টে রক্ষিত সোনায় কোনো ধরনের হেরফের হয়নি; শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ যেভাবে রেখেছিল, সেভাবেই আছে।

আওলাদ বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রুটি বলতে যা আছে, নথিভুক্ত করার সময় ইংরেজি-বাংলার ভুল। এর বাইরে অন্য ত্রুটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই।”