আনন্দের সাথে তৃপ্তি নিয়েই অবসরে যাব: অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে ভবিষ্যৎ নিয়ে নিরাশার কোনো কারণ নেই, যে কোনো মুহূর্তে আনন্দের সাথে তৃপ্তি নিয়েই অবসরে যেতে পারবেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2018, 07:09 PM
Updated : 11 July 2018, 07:09 PM

বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্ট আয়োজিত ‘আগামীর সিলেট- উন্নয়নের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।

মুহিত বলেন, “আমার নিজস্ব অভিমত হচ্ছে আমি শৈশব থেকে শর্ট অব কাইন্ড অব অ্যাসোসিয়েটেড উইথ পাবলিক সার্ভিস, সেটা আমাদের দেশে আমরা যেভাবে করতে পেরেছি এবং বর্তমান যে অবস্থায় পৌঁছেছি তাতে আমার মনে হয়, আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোন ধরনের নিরাশার কোনো কারণ নেই, এটাই আমার একমাত্র তৃপ্তি।”

১০ বছর আগে দেশ নিয়ে এই তৃপ্তি ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের তো এখন চলে যাওয়ার সময়, চলে যাওয়ার সময়ে এ রকমভাবে তৃপ্তি নিয়ে বিদায় হওয়া, এটা ২০০১ সালে যখন ঠিক করলাম যে রিটায়ার করব সে সময় এ তৃপ্তি মোটেই ছিল না। এখন যে কোন মুহূর্তে রিটায়ার করতে অত্যন্ত আনন্দিত, কোনো অসুবিধা নেই। আমার বদ্ধমূল ধারণা আমার তৃপ্তি হচ্ছে, দেশটা এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে, এগিয়ে যেতেই থাকবে।”

২০০৮ সালে সিলেট-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ হাসিনার সরকারে অর্থমন্ত্রী হন মুহিত। ২০১৪ সালে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পরও অর্থ মন্ত্রণালয় সামলাচ্ছেন তিনি।

নিজের নির্বাচনী আসনটি ভাই এ কে এ মোমেনকে ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছার কথা আগেই জানিয়েছিলেন মুহিত। তবে তখনও বলেছিলেন, পরিস্থিতি বুঝে তিনি নিজেও ফের ভোটে দাঁড়াতে পারেন। 

১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া মুহিত ষাট বছরের বেশি কর্মজীবন পার করেছেন। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার পর তখনকার পাকিস্তান এবং পরে স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

সিলেটের উন্নয়ন বাংলাদেশের উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “মাত্র ১০ বছরে যেটা আমরা করতে পেরেছি, এটা একান্তই অসাধারণ। তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ে তা সম্ভব হয়েছে, প্রগতিশীল উপযুক্ত নেতৃত্ব, কার্যকরী কলাকৌশল এবং আমাদের দেশের মানুষেকে কাজ বুঝিয়ে দিলে বুদ্ধিটা এতই প্রখর যে লেখাপড়া কম জানলেও তা পারে।

“উন্নয়ন কার্যক্রম সারা দেশব্যাপী হয়েছে, প্লেনে চড়লে যে দৃশ্য দেখা যায় তা বড় বড় দালান। আমার কৈশোরে বাংলাদেশে আলো ছিল না, বর্তমানে ৯২ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে।”

অনুষ্ঠানে সিলেটের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়, সে বিষয়ে মুহিত বলেন, “সিলেটের অনেক সমস্যা এসেছে। সিলেটের সাথে ঢাকার দূরত্ব অনেক বেশি। ঢাকা-সিলেট এক্সপ্রেসওয়ে করার চিন্তা করছিলাম, কন্ট্রাক্টও হয়ে গিয়েছিল। তবে চীনের কোম্পানি সচিবের কাছে ঘুষ নিয়ে হাজির হয়েছিল, তাকে বিদায় করতে হয়েছে। এখন চিন্তা করছি, নিজেরা করব বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে করার চিন্তা করছি।”

রেললাইনের উন্নয়নের জন্য উদ্যেগে নেওয়া হবে এবং সিলেটে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “এখন শুধু ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন সম্ভব হবে, কারণ এটি সহজ ব্যাপার নয়। উচ্চ মানের জনশক্তি দরকার।“

সিলেট এগিয়েছে এবং সেই অগ্রগতিকে সুসংহত ও ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানিয়ে পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ বলেন, “সিলেটে বিদেশ থেকে প্রচুর টাকা আসলেও বিনিয়োগ হয় খুব কম। চেষ্টা করতে হবে বিনিয়োগটা যেন সরাসরি হয়। সিলেটের মানসম্মত  শিক্ষা, দক্ষতার জন্য প্রশিক্ষণ, পরিবেশ সংরক্ষণ যেমন রাতারগুলসহ অন্যান্য অঞ্চল, হাওড়ের সমস্যাগুলো সমাধান, অবকাঠামো উন্নয়ন, নদী ব্যবস্থাপনার কাজগুলো করতে হবে।”

সিলেট শহরে প্রায় এক হাজার বস্তি রয়েছে, সেগুলোতে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান খলিকুজ্জামান।   

‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’র আহ্বায়ক পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এ সরকারের আমলে সিলেটে অনেক উন্নয়ন হয়েছে এবং হচ্ছে। সিলেট নগরী হওয়া উচিত ছিল বিশ্বমানের, প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সহায়তায় তা হচ্ছে। সিলেটকে বাংলাদেশের মানুষ সুন্দর, সমৃদ্ধশালী ও অসাম্প্রদায়িক নগরী হিসেবে দেখতে চায়। সিলেটে আগামী স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা জয়ী হওয়ার মাধ্যমে তা পূরণ হবে বলে আশা করি।” 

সিলেট বিমানবন্দর এবং রেলসেবা আরও উন্নত করার দাবি জানান সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া চৌধুরী।

বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মামুন আল মাহতাব, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুজহাত চৌধুরীসহ অন্যরা।