কেন গ্যাস আমদানি, প্রশ্ন বদরুল ইমামের

নিজের দেশের গ্যাস না তুলে বিদেশ থেকে আমদানি করা দামি গ্যাসের উপর কেন নির্ভরশীলতা তৈরি করা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন একজন ভূতত্ত্ববিদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2018, 11:26 AM
Updated : 11 June 2018, 02:09 PM

বাংলাদেশের বাজারের চেয়ে প্রায় চার গুণ বেশি খরচে এলএনজি আমদানির মধ্যে গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানিগুলোর দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের উপর গণশুনানি শুরু করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

সোমবার শুনানির প্রথম দিন বাংলাদেশ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির (জিটিসিএল) সঞ্চালন চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাবের শুনানিতে ওই প্রশ্ন তোলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বদরুল ইমাম।  

তিনি বলেন, “এলএনজির মতো দামি জ্বালানির ওপর এতটা নির্ভর করাটা বিপজ্জনক কি না?”

তার মতে, বাংলাদেশের মাটির নিচে ‘অনেক গ্যাস’ আছে। আমদানির পরিবর্তে দেশের গ্যাসের ‘যথাযথ অনুসন্ধান ও উত্তোলন’ করা প্রয়োজন।

যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শেষ করেছে।

পেট্রেবাংলার হিসাবে, বাংলাদেশে যে পরিমাণ গ্যাসের প্রমাণিত মজুদ রয়েছে, তার অর্ধেক উত্তোলন করা হয় ২০১৫ সালের মধ্যে। তারপর মজুদ ছিল ১৩ দশমিক ৬০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)।

গত ২৪ এপ্রিল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির প্রধান অনুষঙ্গ ভাসমান স্টোরেজ ও পুনরায় গ্যাসে রূপান্তরকরণ ইউনিট (এফএসআরইউ) কক্সবাজারের মহেশখালীতে এসে পৌঁছেছে। এই এফএসআরইউ কাতার থেকে আমদানি করা এক লাখ ৩৩ হাজার ঘনমিটার এলএনজি নিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। 

খুব শিগগিরই মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

দেশে গ্যাস সঙ্কটের মধ্যে এই টার্মিনাল ছাড়াও মহেশখালী, চট্টগ্রাম ও খুলনাতে আরো কয়েকটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিকল্পনা প্রক্রিয়াধীন।

এলএনজি আমদানি চূড়ান্ত হওয়ার পরই গ্যাসের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। উত্তোলন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ছাড়া সব ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের গড় দাম ৭ টাকা ৩৯ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৯৫ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে কোম্পানিগুলো। অর্থাৎ বর্তমানের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। 

এর যুক্তি হিসেবে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে বিইআরসিতে দেওয়া এক উপস্থাপনায় দেখানো হয়েছে, ২৫ টাকা ১৭ পয়সা দরে কিনে এর সঙ্গে ভ্যাট, ব্যাংক চার্জ, রিগ্যাসিফিকেশন চার্জসহ নানা ধরনের চার্জ যোগ করে আমদানি করা এলএনজির বিক্রয়মূল্য মূল্য দাঁড়াবে ৩৩ টাকা ৪৪ পয়সা।

এই অঙ্ক দেশে বর্তমানে বিক্রিত গ্যাসের চার গুণ বেশি।

নতুন গ্যাস সরবরাহে পাইপলাইন নির্মাণে বিনিয়োগের কথা উল্লেথ তরে জিটিসিএল প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের সঞ্চালন চার্জ দশমিক ২৬৫৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে দশমিক ৪৪৭৬ পয়সা অর্থাৎ ৬৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

এ প্রস্তাব যাচাই বাছাই করে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি মত দিয়েছে, জিটিসিএলের প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের ট্যারিফ ঘাটতি রয়েছে দশমিক ১০২৭ পয়সা।

“বিদ্যমান ঘাটতি সংকুলানে ট্রান্সমিশন চার্জ সমস্বয় প্রয়োজন,” মনে করছে মূল্যায়ন কমিটি।

তবে জিটিসিএলের সঞ্চালন চার্জ বাড়ানোর বিরোধিতা এসেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।

সংগঠনের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, “পাইপলাইনগুলোর নির্মাণ ব্যয় অত্যধিক বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার সঞ্চালন ক্ষমতাও স্বল্প ব্যবহৃত। ফলে সঞ্চালন ব্যবহার অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

“এই অযৌক্তিক ব্যয়বৃদ্ধি সমন্বয় করে গ্যাসের সঞ্চালন চার্জ বৃদ্ধি করা কি যৌক্তিক?”- প্রশ্ন তোলেন শামসুল আলম।

অন্যান্য কোম্পানির পক্ষ থেকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে সারের ক্ষেত্রে। সার কারখানায় প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম দুই টাকা ৭১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৮০ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যুতে ৩ টাকা ১৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা, শিল্পে ৭ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে ১৫ টাকা, চা বাগানে ৭ টাকা ৪২ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৮০ পয়সা, ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ৯ টাকা ৬২ পয়সা থেকে ১৬ টাকা এবং সিএনজিতে ৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়। মার্চ ও জুলাই থেকে দুই ধাপে তা বাস্তবায়িত হয়।