ওই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনায় দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরেন তিনি।
পরে প্রশ্নোত্তরে অসহিষ্ণুতা প্রকাশের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন মুহিত।পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনে কী ধরনের প্রশ্ন করতে হবে, সে বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে আসতে সাংবাদিকদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান উপস্থিত ছিলেন।
প্রথম সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, এবারের বাজেটের প্রস্তাবিত করকাঠামোতে ধনীদের বেশি সুবিধা এবং মধ্যবিত্ত ও গরিবদের ওপর বেশি করের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন। আপনি কি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন? নাকি আপনার কার্যক্রম বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে কি না?
দ্বিতীয় সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য সিআরআর কমানো, সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকে রাখার নীতিমালা করা এবং সর্বশেষ ব্যাংকের করপোরেট কর হার আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করার পরও ব্যাংকগুলো কি ঋণের সুদের হার কমিয়েছে?
ছোট ফ্ল্যাটের ওপর কর বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে তৃতীয় সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, অনেকেই বলছেন, এটা গরিব মারার বাজেট। আসলেই এটা গরিব মারার বাজেট কি না?
তিন সাংবাদিকের কাছে প্রশ্নগুলো দুইবার শোনেন অর্থমন্ত্রী। এরপরই উত্তেজিত ভঙ্গিতে তিনি বলেন, “আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে, আপনারা এমন সব প্রশ্ন করছেন আমার পক্ষে এগুলো সম্বন্ধে বলতেও লজ্জাবোধ করে।”
“বাংলাদেশ এখন কী অবস্থায় আছে আপনারা জানেন? এদেশে দারিদ্র্য বাড়ছে? দারিদ্র্য কি বাড়ছে?”- সাংবাদিকদের উদ্দ্যেশে প্রশ্ন ছোড়েন তিনি।
তখন কয়েকজন সাংবাদিক উত্তর দেন, ‘না’।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “এদেশে দারিদ্র্য বাড়ছে না। যে বলে বাড়ছে, সে স্রেফ মিথ্যা বলছে। অবশ্যই মিথ্যা বলছে।”
এ সময় কয়েকজন সাংবাদিক চিৎকার করে বলতে থাকেন, “দারিদ্র্য কমছে, তবে বৈষম্য বাড়ছে।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, “বৈষম্য বাড়ে নাই। বাড়ছে, কিন্তু কয়জনের জন্য বাড়ছে দেখেন।”
ক্ষুব্ধ অর্থমন্ত্রী চিৎকার করে বলতে থাকেন, “যারা দেশের পরিবর্তন স্বীকার করে না… বাংলাদেশে এখন ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ লোক গরিব। আপনাদের যখন জন্ম হয়েছে, জন্মের আগে তখন ছিল ৭০ শতাংশ। সাত বছর আগে ৩৭ শতাংশ লোক ছিল দরিদ্র। আজকে ২২ দশমিক ৫০।
পরে উত্তেজিত হয়ে বক্তব্য দেওয়ায় ক্ষমা প্রার্থনা করেন মুহিত।
অনুষ্ঠানের শেষে এসে তিনি বলেন, “এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ায় আমি খুবই দুঃখিত এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তবে এটাও বলব যে, এই সংবাদ সম্মেলনে আসবার সময় সাংবাদিকদের আগে থেকেই চিন্তা করা উচিৎ যে, কী ধরনের প্রশ্ন এখানে উত্থাপন করা প্রয়োজন।
“যাতে বাজেটে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে সেটাকে আরও একটু পরিষ্কার করা যায়। যেখানে খটকা আছে সেই খটকা রিমুভ করা যায়।”
অর্থমন্ত্রী উত্তেজিত ভঙ্গিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেওয়া শেষ করার পর স্পিকারে বক্তব্য শুরু করেন তার পাশে থাকা পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।
তবে সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রীরও লেগে যায়।
লোটাস কামাল বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে দেশি-বিদেশি সংবাদপত্রে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি পুরনো প্রতিবেদন বের করে পড়তে শুরু করলে অশ্বস্তি প্রকাশ করেন সাংবাদিকরা।
তখন কোনও কোনও সাংবাদিক প্রশ্ন করার বিষয়টি তোলেন।
এ সময় লোটাস কামাল বলেন, “আপনাদের হয়ত এ কথাগুলো ভালো লাগছে না। কিন্তু আপনারা যখন প্রশ্ন করেন তখনতো আমরা শুনি।”