অনলাইনে ভ্যাট, করসীমা নিয়ে অসন্তোষ

অনলাইনে কেনাকাটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠার মধ্যে বাজেটে এই খাতে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাবে অসন্তোষ জানিয়েছেন সাধারণ নাগরিকরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2018, 05:57 PM
Updated : 7 June 2018, 05:57 PM

পাশাপাশি করমুক্ত আয়ের সীমা না বাড়ানোয়ও হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেকে।

বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় নাগরিকদের এই প্রতিক্রিয়া উঠে আসে।

অনলাইনে পণ্য বা সেবার ক্রয়-বিক্রয়ের পরিসর বাড়াতে ‘ভার্চুয়াল বিজনেস’ নামে একটি নতুন সেবার সংজ্ঞা সংযোজন করে ৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

যানজটের নগরী ঢাকায় প্রায়ই অনলাইনেই কেনাকাটা সেরে নেন পেশায় চিকিৎসক সিলভিয়া সুলতানা।

তিনি বলেন, “বাসায় বসে অনলাইন থেকে সহজে কেনাকাটা করা যেত। এখন ভ্যাট বাড়ানোর কারণে তো অনলাইনেও জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেবে। অবস্থাটা তো আর আগের মতো থাকবে না।”

এছাড়া উবার, পাঠাওয়ের মতো রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো যে আয় করবে, তার ৫ শতাংশ ভ্যাট হিসেবে দিতে হবে সরকারকে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্ধী জান্নাতুল ফেরদৌস লাকি বলেন,  “অনলাইনে কেনাকাটা ও রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। ওদের ভ্যাট বাড়ালে তো আলটিমেটলি টাকাটা যাবে আমাদের পকেট থেকেই।”

সব ধরনের প্রসাধন সামগ্রীর উপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব ‘হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

সফটওয়্যার প্রকৌশলী রাশেদুলের প্রত্যাশা ছিল, তথ্যপ্রযুক্তিখাতে কর আরও কমিয়ে আনবে সরকার।

তিনি বলেন, “আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ হচ্ছে। তবে আমরা এখনও ১০ বছর পিছিয়ে আছি। অনেক অনুন্নত দেশও তথ্যপ্রযুক্তিতে আমাদের চেয়ে এগিয়ে।

“সরকার যতটা বলে আমরা আসলে ততটা আগাইনি। এজন্য এইখাতে নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে একে এগুনোর সুযোগ দিতে হবে।”

নতুন অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা দুই লাখ ৫০ হাজার টাকাই রাখা হয়েছে, যা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা উচিৎ বলে মনে করেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রাশেদুল আলম।

তিনি বলেন, “সরকার বলছে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, তাই করসীমা ৫ লাখ টাকা করা উচিত।”

করমুক্ত আয়ের সীমা না বাড়ানোয় হতাশা প্রকাশ করেছেন সরকারি কর্মকর্তা জাকারিয়া হোসেন খানও।

তিনি বলেন, “এখন একজন দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাকেও আয়কর দিতে হয়। আমরা যারা ছোটখাটো চাকরি করি, বেতন কম, তাদের করমুক্ত আয়সীমা আরও বাড়ানো দরকার ছিল।”

নির্বাচনের বছরে দেওয়া বাজেটে অর্থমন্ত্রী সবাইকে ‘খুশি’ করার চেষ্টা করেছেন বলে মনে করেন ব্যাংক কর্মকর্তা এনাম আহমেদ।

তিনি বলেন, “বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর করপোরেট ট্যাক্স কমানোর কথা বলা হয়েছে। এটা ব্যাংক মালিকদের খুশি করা ছাড়া আর কিছু না।”

এনাম বলেন, “গত বাজেটেও অনেক ঘাটতি ছিল। ঘাটতি পূরণ করতে বিদেশি অনুদানের ওপর নির্ভর করতে হবে। উচ্চহারে ঋণ নিয়ে তা শোধ করতে হবে। এটা একটা চাপ তৈরি করবে।”

ঢাকায় যানজট নিরসনে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা দরকার বলে মনে করেন মিরপুরের বাসিন্দা সোলাইমান হোসেন।

বাজেটে খুব বেশি পণ্যের শুল্কহারে পরিবর্তন না এলেও বাজারের কী অবস্থা হয়, সেদিকেই দৃষ্টি সাধারণ মানুষের।

বাজেট কী, তা বোঝেন না না ভ্যানচালক গোলাম মাওল। তার চাওয়া, বাজার যেন সহনীয় থাকে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের মতো গরিব মাইনষের দিকে তাকায়া দাম বাড়ানো উচিত। আমরা যেন দুই বেলা খায়া পইরা বাঁচতে পারি, সেই দিকটা সরকারের খেয়াল রাখা উচিত।”

নিত্য পণ্যের দাম যাতে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে, সেদিকেই সরকারের দৃষ্টি রাখা উচিৎ বলে মনে করেন মহাখালীর ইশরাত ফার্স্ট ফুন্ড টি স্টলের মলিক আসিফুল ইসলাম সোহেল।

প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেটের তিনটি স্তরে মূল্যহার বাড়ানোর প্রস্তাব, দুটি স্তরে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব, সিগারেট ও বিড়ির কাগজের উপর সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব এবং হাতে তৈরি বিড়ির খুচরা মূল্যহার বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এ নিয়ে সোহেল বলেন, “সিগারেটের দাম বাড়লেও যারা সিগারেট খাওয়ার তারা খাবেই।”

বাজেট ঘোষণার পর বিভিন্ন পণ্যের মূল্য নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সিটি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শিরিন আক্তার শীলা।

তিনি বলেন, “আজকে নিউজে দেখলাম কিছু জিনিসের দাম বাড়ানো হয়েছে বাজেটে। দামটা যেন সহনীয় মাত্রায় বাড়ে। ঈদ উপলক্ষে সব ফ্যামিলিরই একটা বাজেট থাকে, সেখানে যদি জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়, তাহলে তো সমস্যা।”