উপকূলের ৫১২ কিলোমিটারে হবে সবুজ বেষ্টনী

বনভূমি বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে ২০২১ সালের মধ্যে উপকূলীয় ৫১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2018, 12:27 PM
Updated : 7 June 2018, 12:37 PM

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য গতবারের চেয়ে বরাদ্দ বাড়িয়ে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

মুহিত নতুন অর্থবছরে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জন্য এক হাজার ২৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১৫০ কোটি টাকা বেশি।

অন্যদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৯ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা, যা গতবারের চেয়ে ৮০৫ কোটি টাকা বেশি।

বাজেট বক্তৃতায় পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেইঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যানের আলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য সামগ্রিকভাবে ৬টি থিমেটিক এরিয়ার ৪৪টি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। জলবায়ুকেন্দ্রিক ব্যয় নিরূপণের সুবিধার্থে সরকারের বাজেট শ্রেণিবিন্যাসের আওতায় এ কার্যক্রমগুলোকে আনা হয়েছে।”

নিজস্ব অর্থায়নে গঠিত ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।

পরিবেশ দূষণ মোকাবিলায় উদ্যোগ উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “অত্যধিক দূষণযুক্ত বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ, হালদা নদীসমূহ ও নদী উপকূলবর্তী এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে সংরক্ষণের জন্য কার্যব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।”

সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা, হাইড্রোক্লোরোফ্লোরো কার্বনের ব্যবহার ৩৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য নানামুখী কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।

বনভূমি সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেওয়ার কথা উল্লেখ করে মুহিত বলেন, “চারা উৎপাদন, ব্লক-স্ট্রিপ বাগান সৃজন, উপকূলে চর বনায়ন, সামাজিক বনায়ন ইত্যাদি টেকসই বন ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে বনভূমি সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করছি।”

২০২১ সালের মধ্যে ৫১২ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকা জুড়ে ২৮ হাজার ৫৬০ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগান সৃজনের মাধ্যমে সবুজবেষ্টনী স্থাপনের পরিকল্পনা সরকারের আছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

“এছাড়াও সুন্দরবনসহ ১৫টি সংরক্ষিত এলাকায় কার্বন মজুদ নির্ণয়ের কাজ চলছে। তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বন ব্যবস্থাপনার স্বার্থে স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে ফরেস্ট কভার ম্যাপ প্রণয়ন এবং বনজ সম্পদের হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়াও ভূমি রেকর্ড ও ম্যাপ ব্যবহার করে ভূমি শনাক্তকরণ ও বনের সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু হয়েছে।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, “পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন খাতে ২০১৬-২০২১ মেয়াদী জাতীয় বিনিয়োগ পরিকল্পনা প্রণয়ন করে এ খাতের মোট বিনিয়োগ চাহিদা, বিদ্যমান বিনিয়োগ ও বিনিয়োগ ঘাটতি নির্ণয় করা হয়েছে।”

জাতীয় পরিবেশ কাউন্সিল অনুমোদিত এই পরিকল্পনায় ৬০টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার বাস্তবায়নযোগ্য অগ্রাধিকারভিত্তিক বিনিয়োগ কার্যক্রম চিহ্নিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি

“হিসাবমতে চিহ্নিত কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬-২০২১ মেয়াদে মোট ১১ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন, যার মধ্যে সরকারি তহবিল ও উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় ইতোমধ্যে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং নিরূপিত বিনিয়োগ ঘাটতির পরিমাণ ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।”

এই পরিকল্পনার আওতায় ফলাফলভিত্তিক কাঠামোর মাধ্যমে ইতোমধ্যে বিনিয়োগের ফলাফল পরিবীক্ষণের কাজ শুরু করা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।