রোববার ঢাকার মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘স্টেট অব দ্য ইকোনমি ইন ২০১৭-১৮’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে সরকারের প্রতি এই পরামর্শ দেয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান আইন দিয়ে ঋণ খেলাপিদের আটকানো যাবে না, ফলে মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়েই যাবে।
তিনি বলেন, “খেলাপি ঋণগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। নিম্ন মানের, সন্দেহজনক ও সবচেয়ে খারাপ ঋণ। আমাদের সবচেয়ে খারাপ ঋণের পরিমাণই সবচেয়ে বেশি বাড়ছে।
মোস্তাফিজুর বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে এখন মন্দ ঋণ (এনপিএল) ৯ শতাংশের ওপরে আছে। পুরনো ঋণগুলোকে অবলোপনের পরও এই অবস্থা দাঁড়াচ্ছে। তা করা না হলে মন্দ ঋণের মাত্রাটা আরও বেশি হত।
“যেসব বুদ্ধিমান লোক ঋণকে খেলাপি করার পেছনে কাজ করছেন বা কারসাজি করছেন, তাদের সাথে পাল্লা দেওয়ার মতো সক্ষমতা আমাদের এই আইনে নেই।”
তাই ২০০৩ সালের মানি লোন কোর্ট অ্যাক্ট এবং ১৯৯৭ সালের দেউলিয়া বিষয়ক আইনটি সংস্কার করে যুগোপযোগী করার সুপারিশ করেন তিনি।
মোস্তাফিজুর বলেন, ভারতেও প্রায় আট লাখ কোটি টাকার মতো মন্দ ঋণ আছে। এটা তাদের জিডিপের হিসাবে প্রায় ১০ শতাংশের মতো, প্রায় বাংলাদেশের সমান।
“কিন্তু তারা এখন ভালো পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারা খেলাপি ঋণের বিষয়ে জিরো টলারেন্স সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেমন- ঝুঁকিপূর্ণ ঋণও দেওয়া যাবে না, আবার ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদও সেভিংসে আনা যাবে না। কু ঋণের অবস্থান একটা নিদির্ষ্ট হারের উপরে থাকলে নতুন জনবল নেওয়ার উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে সরকারের দায়ের বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে সিপিডির সাবেক নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর বলেন, “খেলাপি ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক খাতগুলোর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এ কারণেই সরকারের দায়িত্বটা বেশি চলে আসে। কারণ সরকারের হাতে যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোই সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে।”
তিনি দক্ষিণ এশিয়া ও পুর্ব এশিয়ার দেশগুলোর চিত্র তুলে ধরে বলেন, যেসব দেশগুলো অর্থনীতিতে খুব ভালো করছে, যেমন ভিয়েতনাম বা থাইল্যান্ড, তাদের ব্যাংক খাতে মন্দ ঋণের হার ২ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এটা ৮ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। এটা কোনোভাবেই ভালো নয়।
দেশের ব্যাংকে নগদ অর্থের সঙ্কটের বিষয়টিতে নজর দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মোস্তাফিজুর বলেন, আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ না নেওয়া হলে এটা অর্থনীতিকে চাপে ফেলতে পারে।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিবেশী ভারত নানা নিয়ম-নীতির মাধ্যমে আর্থিক খাতকে একটা জায়গায় নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য অনেকগুলো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিপরীত সিগন্যাল যাচ্ছে। যেমন পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়া হলে সেটাও পরিশোধ করা হচ্ছে না।
“ইনসাইডার ল্যান্ডিং বা অভ্যন্তরীণ ঋণ অনুমোদন অনুৎসাহিত করার জন্য আমরা পরিচালকের সংখ্যা কমিয়েছিলাম, আবার বাড়িয়েও দিলাম। বেসরকারি ব্যাংকের ২৫ শতাংশের মতো রাখার একটা সিস্টেম ছিল, এটা আবার ৫০ শতাংশ করলাম।”
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখার বিধান থাকলেও তা ৫০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে।
এই অবস্থায় নতুন ব্যাংক অনুমোদন আর্থিক খাতে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মোস্তাফিজুর।
তিনি বলেন, “এই যে সিগন্যালগুলো যাচ্ছে, এগুলো বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং এগুলোর সমাধান না করে নতুন (ব্যাংক) পারমিশন দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। এটা আর্থিক শৃঙ্খলা এবং প্রয়োজনের নিরীখেও না।”
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রতিষ্ঠানের সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টচার্য্য ও গবেষণা পরিচালক খন্দকর গোলাম মোয়াজ্জেমও বক্তব্য রাখেন।