পোশাকখাতে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়াবে প্রবৃদ্ধি: আইএফসি

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কারখানায় লাইন সুপারভাইজার বা তত্ত্বাবধায়ক পর্যায়ে নারীকর্মীদের সংযুক্তি উৎপাদন প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে বলে আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) গবেষণায় বের হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2018, 11:32 AM
Updated : 30 May 2018, 11:50 AM

বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘কাটিং থ্রু দ্য ক্লথ সিলিং’ শীর্ষক আইএফসির ওই গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে আইএফসি বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের কান্ট্রি ম্যানেজার ওয়েন্ডি ওয়ার্নার বলেন, ওয়েন্ডি ওয়ার্নার বলেন, নারীদের প্রশিক্ষণ প্রশিক্ষণ লাইনে উৎপাদনশীলতা বাড়িয়েছে। আরও নতুন নতুন কারখানা এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যুক্ত হলে দেশের পোশাকখাতে নারীদের ক্যারিয়ারের অগ্রগতি হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী সুইং অপারেটরদের প্রশিক্ষণ বাংলাদেশে তৈরি পোশাকখাতে পণ্যের উৎপাদন তত্ত্বাবধায়নের ক্ষেত্রে (সুপারভাইজার পদ) নারীদের ভূমিকা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে, যা এখাতে নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে নারীদের অনুপস্থিতি কমিয়ে আনার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ সুইং লাইনের উৎপাদনশীলতা বাড়াবে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আরএমজি প্রজেক্টের পরিচালক আনিসে উইলিয়ামের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণা করা হয়।

যেসব কারখানায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী সুপারভাইজার রয়েছে সেসব কারখানার গড় উৎপাদনশীলতা ৫ শতাংশ বেড়েছে এবং পাশাপাশি প্রডাকশন লাইনে অনুপস্থিতির সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে বলে এই গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশে গড়ে ২০টি স্যুইং লাইনের মধ্যে ১৯টিতে কাজ করছে পুরুষ কর্মী, যদিও এই খাতের প্রোডাকশান লাইন কর্মীদের ৮০ শতাংশই নারী।

২০১৬ সাল থেকে ২৮টি পোশাক কারখানার ১৪৪ জন নারীকর্মীকে সুপারভাইজার পদে উন্নতির জন্য ‘কাজের উন্নতি ও উপাদনশীলতা’ (ওয়ার্ক প্রগ্রেশন অ্যান্ড প্রডাক্টিভিটি টুলকিট) ডব্লিউপিটি শীর্ষক এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে আইএফসি।

এই কর্মসূচির মধ্যে ছিল দক্ষ সুপারভাইজার হয়ে গড়ে উঠতে প্রয়োজনীয় নেতৃত্বগুণ ও যোগাযোগ দক্ষতা নিয়ে চার দিনের কর্মসূচি ‘সফট স্কিল ট্রেইনিং’। কারিগরি দক্ষতা নিয়ে ছিল ৫ দিনের প্রশিক্ষণ। এরপর প্রশিক্ষণার্থীরা ৮ সপ্তাহ ধরে হাতে কলমে একজন অভিজ্ঞ সুপার ভাইজারের তত্ত্বাবধায়নে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটান। কীভাবে উপযুক্ত ও দক্ষ নারী লাইনম্যানকে সুপারভাইজার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া যায় সে বিষয়ে উচ্চ ও মাঝারি পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

নারীকর্মী ও সংশ্লিষ্ট কারখানার উৎপাদনে এধরনের প্রশিক্ষণের ফলাফল জানতে চালানো হয় দুই বছর মেয়াদী গবেষণা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণে আইএফসির ডব্লিউপিটি প্রশিক্ষণ সুইং লাইনে লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৪৪ জন নারী এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিল যাদের ৯২ জনই প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া হয় যেখানে তাদের মজুরিও বেড়েছে। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া ৬০ শতাংশ নারীই এই সুযোগ গ্রহণ করেছেন। প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারী কারখানাগুলোতে নারী সুপারভাইজারের সংখ্যা ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া ১০টি কারখানায় সুপারভাইজার পদে কোনো নারীই ছিলেন না প্রশিক্ষণ শুরুর আগে।

বাংলাদেশে ৪০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পোশাক তৈরি শিল্পের সঙ্গে জড়িত যার ৬০ শতাংশই নারী। জাপানের অর্থ মন্ত্রণালয় ও বেটারওয়ার্ক বাংলাদেশের সহযোগিতায় আইএফসি এই ২৮টি পোশাক কারখানার কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য বেছে নেয়। প্রকল্পে অতিরিক্ত অর্থায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক পরিচালিত লেটস ওয়ার্ক মাল্টি ডোনার ট্রাস্ট ফান্ড।

প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া কারখানাগুলো হচ্ছে- আধুনিক পোশাক শিল্প, একেএইচ নিটিং অ্যান্ড ডাইং, অনন্ত গার্মেন্টস, আরাবি ফ্যাশনস, বার্ড আরএনআর ফ্যাশন, বার্ড ফেডরেক্স, কলম্বিয়া অ্যাপারেলস, কর্টজ অ্যাপারেল, ক্রিসেন্ট ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন, এসকোয়ার নিট কমপোজিট, এশেনশিয়াল ক্লথিং, এসেস ফ্যাশন, ফকির ফ্যাশন, জেনেসিস ডেনিম, ইন্টরস্টফ অ্যাপারেল, জেকন গার্মেন্টস, জিন্নাত নিটওয়্যার, নিট এশিয়া, রাকুফ অ্যাপারেল ওয়াশিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, সাফা সোয়েটার, শামস স্টাইলিং, সিনহা নিটওয়্যার, সাউথ ইস্ট টেক্সটাইল, স্পরো অ্যাপারেল, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ, স্টার্লিং স্টাইল, দ্যটস ইট গার্মেন্টস ও ভিনটেজ গার্মেন্টস।

প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া ফকির ফ্যাশনের সুপারভাইজার করিমা বিবি অনুষ্ঠানে বলেন, “আগে সুপারভাইজারের কাজ করার সাহসই হতো না। কীভাবে এক সাথে এতো কাজ ম্যানেজ করা যায় তা ভাবতেই আমরা ভয় পেতাম। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর এগুলো আমাদের কাছে একেবারেই সহজ হয়ে গেছে।

“এখন কারখানায় সবাই আমাকে সম্মান করে। আমার বেতনও অনেক বেড়েছে। এমনকি পরিবারে আমার স্বামী আমাকে এখন অনেক বেশি সমীহ করে,” বলেন করিমা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিজিএমইএ সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, কাজের ব্যস্ততার কারণে পোশাক কারখানাগুলোতে নিজ উদ্যোগে এ ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করা কঠিন হয়ে পড়ে। আইএফসি যে ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে তা অবশ্যই ইতিবাচক। এধরনের কর্মসূচি চলমান থাকতে হবে এবং এর আওতা আরও বাড়াতে হবে।

আয়ত স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার নামের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রতিনিধি নুসরাত আামান বলেন, বাংলাদেশে পোশাক খাতের মতো এতো বড় একটি সেক্টরে কয়েকশ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিলে এর সুফল সর্বব্যাপী হবেনা। এর জন্য প্রয়োজন হবে ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে বড় আকারে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।