১২ লাখ কোটি টাকার বাজেটের পরিকল্পনা অর্থনীতি সমিতির

আগামী অর্থবছরের জন্য ১২ লাখ কোটি টাকার একটি বাজেটের পরিকল্পনা হাজির করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, যা বর্তমান অর্থবছরের বাজেটের তিন গুণ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2018, 10:48 AM
Updated : 26 May 2018, 12:19 PM

বিশাল এই বাজেটের পরিকল্পনা দিয়ে অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেছেন, “আমাদের প্রস্তাবিত বাজেট যুক্তিসঙ্গত এবং দেশের অন্তর্নিহিত শক্তির বিচারে যৌক্তিক।”

বাংলাদেশের চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট ৪ লাখ কোটি টাকার, যাও উচ্চাভিলাষী বলে সমালোচনা রয়েছে।

আগামী জুনে যে বাজেট অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দিতে যাচ্ছেন, তা ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে বলে আভাস দিয়েছেন তিনি।

নতুন অর্থবছরের বাজেট সংসদে ওঠার আগে শনিবার বিকল্প বাজেট নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে আসে অর্থনীতি সমিতি।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বারকাত।

কোনো ধরনের বৈদেশিক ঋণ ছাড়াই এ বাজেট বাস্তবায়নের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করার সঙ্গে অতীতের পুঞ্জীভূত পাওনা পরিশোধের জন্য ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার পরিকল্পনা করেন তিনি।

“আমাদের প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেটে বৈদেশিক ঋণের কোনো ভূমিকা থাকবে না। আমরা ঋণগ্রস্থ জাতি হবার দৈন্য দেখাতে চাই না।”

বারকাত বলেন, “আমাদের বিকল্প বাজেটের ৮১ শতাংশ বা ৯ লাখ ৯০ হাজার ৮২০ কোটি টাকার জোগান দেওয়া হবে রাজস্ব আয় থেকে।”

চলতি অর্থবছরের বাজেটে বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা; যা আদায় করাও চ্যালেঞ্জ মনে করছিলেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।

অর্থনীতি সমিতি প্রস্তাবিত বাজেটের ১৯ শতাংশ বা ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার ঘাটতির ১ লাখ কোটি টাকা বা ৪৪ শতাংশ অর্থ সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্ব থেকে আনার পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।

তারা বলছেন, বন্ড বাজার থেকে আসবে ঘাটতি বাজেটের ২১ শতাংশ বা ৪৫ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ৬০ হাজার কোটি টাকা বা ২৭ শতাংশ এবং দেশীয় ব্যাংক ঋণ থেকে নেওয়া হবে ৯ শতাংশ বা ২০ হাজার কোটি টাকা।

বিশাল বাজেটের রাজস্ব আয় বাড়াতে নতুন ২২টি উৎসের কথা বলেন বারকাত।

এরমধ্যে রয়েছে- অর্থ পাচার রোধ থেকে আহরণ, কালো টাকা উদ্ধার থেকে আহরণ, বিদেশি নাগরিকদের উপর কর, বন্ড মার্কেট, সরকারি বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্ব, সম্পদ কর, বিমান পরিবহন ও ভ্রমণ কর, তার ও টেলিফোন বোর্ড, টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন, বিআইডাব্লিউটিএ, বেসরকারি হাসপাতাল অনুমতি নবায়ন ফি এবং পৌর হোল্ডিং।

বারকাত বলেন, তাদের প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন তিনটি খাত থেকেই অতিরিক্ত ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হতে পারে। যেমন- সম্পদ কর থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা, অর্থপাচার রোধ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং কালো টাকা উদ্ধার করে ২৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত আয় করা সম্ভব।

প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের বাজেট’ আখ্যায়িত করে এই অধ্যাপক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে এখন ১ শতাংশের দ্বারা, ১ শতাংশের জন্য ও ১ শতাংশের অর্থনীতি বলা হচ্ছে।

“বাংলাদেশেও অঢেল সম্পদ গুটিকয়েক ধনীর হাতে পুঞ্জীভূত হয়েছে। তাই দেশের অর্থনীতিকেও এখন ‘রেন্ট সিকারদের দ্বারা, রেন্ট সিকারদের জন্য ও রেন্ট সিকারদের’ অর্থনীতি বলা যায়।”

যারা নিজেরা সম্পদ তৈরি না করে নানাভাবে অন্যের সম্পদ হরণ করেন, তাদের ‘রেন্ট সিকার’ আখ্যায়িত করে বারকাত বলেন, “ধনীদের মধ্যেও এখন এক ধরনের ‘সুপার’ ধনী তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি তাদের লুটপাট বেড়েছে।”

প্রস্তাবিত এই বিকল্প বাজেটে বরাদ্দের ক্ষেত্রে শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়।

বারকাত বলেন, “কারণ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নত দেশে রূপান্তরে মানব শক্তি উন্নয়নে শিক্ষার বিকল্প নেই।”

শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৬৪ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা রেখেছেন তিনি। এ প্রস্তাব চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বরাদ্দের তুলনায় চার গুণ বেশি। চলতি বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৫ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত এ বিকল্প বাজেটে ৮৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। চলতি অর্থবছরে এ খাতের বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।

বারকাত জানান, তাদের বিকল্প বাজেটে ১৫টি বৃহৎবর্গীয় খাতের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে তৃতীয় বৃহত্তম বরাদ্দপ্রাপ্তিযোগ্য খাত।

“তাই এখাতে বর্তমান বাজেটের ১২ গুণ বাড়িয়ে ২ লাখ ৫২ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করছি।”

তিনি পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের জন্য ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করে বলেন, “প্রস্তাবিত বাজেটে যৌক্তিক কারণেই অবকাঠামো উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে।”

চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৫০ হাজার ৮০ কোটি টাকা।

বারকাত বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যান খাতে চলতি অর্থবছরে ২৪ হাজার ১২৫ কোটি টাকার বরাদ্দ ছিল।

“নতুন বাজেটে এ খাতে আমরা ৩গুণ বাড়িয়ে ৭২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।

সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দিন আহমেদও বক্তব্য রাখেন।