সোনা আমদানিতে ডিলার নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত ডিলারদের মাধ্যমে সোনা আমদানির বিধান রেখে ‘স্বর্ণ নীতিমালা ২০১৮’ অনুমোদন করেছে অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2018, 11:01 AM
Updated : 23 May 2018, 12:11 PM

তবে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় মন্ত্রিসভা থেকে এই নীতিমালার চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বুধবার অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এই নীতিমালা অনুমোদনের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এখন স্বর্ণ আমদানি করব, এতদিন তো আমদানি হত না, সব স্মাগল হত। কোনো দিন কোনো স্বর্ণ আমদানি এই দেশে হয়নি।”

আমদানির নীতিমালা না থাকায় এতদিন বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বৈধ উপায়ে সোনা আমদানির সুযোগ ছিল না। কিন্তু শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে প্রচুর সোনা ঠিকই দেশে এসেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

চোরাচালানে আটক সোনা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়ার পর নিলামে বিক্রির বিধান থাকলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে নিলাম না করায় বৈধ উৎস থেকে সোনা কেনার সুযোগ সীমিত বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা।

অর্থমন্ত্রী বলেন, নীতিমালাটি এখন মন্ত্রিসভায় যাবে, সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। নীতিমালা পাস হলে সোনা আমদানির লাইসেন্স নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে।

পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে স্বর্ণের বাণিজ্যকে নিয়মের আওতায় আনার উদ্দেশ্যে এ নীতিমালা করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, স্বর্ণ আমদানির পর ‘ভ্যালু অ্যাড করে’ আবার তা রপ্তানি করার সুযোগ থাকছে এই নীতিমালায়।

“এটার ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে একটা রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক হচ্ছে। এটার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিলার নিয়োগ করবে, যাদের মাধ্যমে (স্বর্ণ) আমদানি হবে। কারা কারা আমদানি করতে পারবে সেই ক্রায়টেরিয়া থাকবে। ফলে বৈধভাবে ব্যবসাটা ভালোভাবে চলতে পারবে।”

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘অনানুষ্ঠানিকভাবে’ এখন যে আমদানি হয় তা নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

“ওইভাবে কেউ বার আনতে পারবে না। অনুমোদিত ডিলার (সোনার) বার আনবে, বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্য ভাণ্ডার মেইনটেন করবে।”

গতবছর বনানীর হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদের পরিবারের মালিকানাধীন আপন জুয়েলার্সের ১৫ দশমিক ৩ মণ সোনা এবং ৭ হাজার ৩৬৯টি হীরার অলঙ্কার শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর জব্দ করলে সোনা আমদানির অনুমতি না থাকার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।

শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের অভিযোগ ছিল, জব্দ করা সোনা ও গয়নার বৈধ কোনো উৎসব আপন কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেনি।

আপনের সোনা ফেরত দেওয়ার দাবিতে ধর্মঘটের হুমকি দিয়ে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সহ-সভাপতি এনামুল হক খান দোলন সে সময় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন,আপন জুয়েলার্স যেভাবে ব্যবসা করেছে, সারা দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা একইভাবে ব্যবসা করেন।

যেহেতু সরকার স্বর্ণ আমদানি করার সুযোগ দেয়নি, সেহেতু যেভাবে তারা যুগ যুগ ধরে ববসা করে আসছেন, সেটাই বৈধ বলে আরেক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। 

বৈধভাবে সোনা আমদানির সুযোগ করে দিতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মধ্যেই স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা, স্বর্ণ শিল্পী নীতিমালা করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

পরে সংসদের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও স্বর্ণ আমদানি ও জুয়েলারি শিল্পের জন্য একটি যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করার কথা বলেন।

মুহিত বলেছিলেন, “জুয়েলারি আবহমান বাংলার একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। বাংলাদেশে জুয়েলারি শিল্পের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ থাকলেও প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তার অভাবে এ পর্যন্ত এই শিল্পের তেমন বিকাশ হয়নি।”

গতবছর শেষ দিকে প্রকাশিত টিআইবির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈধ পথে আমদানি না হওয়ায় স্বর্ণখাতে বছরে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি ৪৮৭ থেকে ৯৭৪ কোটি টাকা।

দেশের বাজারে বার্ষিক ১৮ থেকে ৩৬ মেট্রিক টন সোনার চাহিদা থাকার পরও এই চাহিদার ‘সিংহভাগ’ চোরাচালানের মাধ্যমে পূরণ হচ্ছে এবং গত চার অর্থবছরে বিমানবন্দরে ১ হাজার ৬৭৪ কেজি সোনা আটক হয়েছে বলে তথ্য দেওয়া হয় টিআইবির প্রতিবেদনে ।