সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমন্বয় বাজেটের পর: অর্থমন্ত্রী

আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের পর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2018, 12:38 PM
Updated : 12 May 2018, 01:02 PM

শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের যৌথ উদ্যোগে বাজেটপূর্ব আলোচনার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান। 

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ আলোচনা সঞ্চলানা করেন সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার।

সবশেষ ২০১৫ সালের ১০ মে সবধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ হার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হয়েছিল।

সরকারের ঋণের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে বলে গত বছরের মে মাসেও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু পরে বাজেট অধিবেশনে মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরা অর্থমন্ত্রী ওই ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করায় শেষ পর্যন্ত আর সুদের হার কমানো হয়নি।

কিন্তু বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ অর্থ ধার করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল, প্রথম আট মাসেই (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সরকার তার চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি ঋণ নিয়ে ফেলেছে বলে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য।

প্রাক-বাজেট আলোচনায় মুহিত বলেন, “সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কিছুটা বেশি বলে সকল পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। এ খাতের সুদের হার বাজেটের পর সমন্বয় করা হবে।”

আলোচনায় অংশ নেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, এনবিআরের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান প্রমুখ।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শনিবার ঢাকা চেম্বার-সমকাল-চ্যানেল ২৪ আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

আলোচনায় কর ও ভ্যাট, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিল্প, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ, আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজারও উঠে আসে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে (এডিআর) কিছু সংশোধন করে গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে এর ব্যবহার বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে।

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দের প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রীর সায় মেলেনি।

তিনি বলেন, “এটা হবে না। কারণ এটা বাস্তবায়ন করা যায় না। এবারও হয়তো ১০০ কোটির টাকার বেশি হবে না।”

তবে শিল্প কারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টার করার সিদ্ধান্ত এখনো কার্যকর না হলেও আগামী বাজেটে বিশেষ করে বড় শিল্প কারখানাগুলোতে ডে-কেয়ার সেন্টার বাধ্যতামূলক করা হতে পারে।

পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, “রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিকে একসময় শেয়ার বাজারে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। তারপরে আমরাই আবার পুজিঁবাজার সংস্কার কার্যক্রমের কারণে তা বন্ধ করে রেখেছিলাম।

“পুজিঁবাজারের সংস্কার যতটুকু করার আমরা সেটা করেছি। তার আমি ইনস্ট্রাকশন দিয়েছি। কিন্তু তার ওপর এখনো কোনো অ্যাকশন হয়নি।”

শেয়ারবাজারে আনার জন্য সরকারের ২৬টি কোম্পানিকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

আগামী বাজেটে কর্পোরেট কর কিছুটা কমানোর ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে অবহিত করেছি।   

“তরুণরা কর দিতে আগ্রহী। তাদের ওপর বিশ্বাস রেখে এবার করপোরেট কর হার কমাচ্ছি।”

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলেন, “১৯৯১ সালে আমরা যখন ভ্যাট আইন করি তখন ভারতের পরবর্তীতে হওয়া প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দেখতে আসছিলেন। অর্থাৎ তখনও আমরা কতো এগিয়ে ছিলাম। আর এখন আমরা ভারতের চেয়ে কতো পিছিয়ে আছি।”

ফাইল ছবি

এর আগে বাজেট প্রস্তাবনায় ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি হোসেন খালেদ কর্পোরেট ডিভিডেন্টের আয়ের ওপর বহুস্তর কর প্রত্যাহারের পাশাপাশি কর হার ২০ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার সুপারিশ করেন।

ব্যক্তি শ্রেণিতে আড়াই লাখ টাকার পরিবর্তে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়।

এছাড়াও পাট খাতের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত মহাপরিকল্পনা, জুট পেপার এবং পাল্প আইন প্রণয়ন, পাট পণ্যের বহুমূখীকরণ, পাটের মণ্ড এবং কাগজ তৈরি সংক্রান্ত গবেষণায় বাজেটে বরাদ্দ, পাটপণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা এবং এলসির মাধ্যমে পাটপণ্যের রপ্তানি বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

এছাড়াও ডিসিসিআই সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম অবকাঠামো, বিদ্যুৎ জ্বালানি সংক্রান্ত প্রস্তাবনায় ঢাকা-চট্টগ্রামের জন্য এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, করিডোর সংলগ্ন অঞ্চলে ন্যাচারাল স্যাটেলাইট শহর উন্নয়নে নীতি সহায়তা ছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দরে গ্যান্ট্রি ক্রেন স্থাপন, কর্ণফুলী নদী ড্রেজিংয়ের সুপারিশ করেন।

কর ও ভ্যাট নিয়ে আলোচনায় ঢাকা চেম্বারের পক্ষ থেকে ধাপে ধাপে কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে আসিফ ইব্রাহীম বিদ্যুৎ জ্বালানির বিষয়ে স্থানীয় কয়লা ব্যবহারে একটি নীতি, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব প্রদান এবং বেসরকারি খাতের সামর্থ্য ও বর্তমান মূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে এলএনজির মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব করেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আগামী অর্থবছরে বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব একটি বাজেট দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।