পোশাকে ভর করে রপ্তানিতে সুবাতাস

তৈরি পোশাকের উপর ভর করে দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2018, 01:02 PM
Updated : 10 May 2018, 01:02 PM

চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সার্বিক রপ্তানি আয় সাড়ে ৬ শতাংশ বাড়লেও তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এই খাতে আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ।

অর্থবছর শেষে পোশাক রপ্তানি ৩০ বিলিয়ন (৩ হাজার কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন রপ্তানিকারকরা।

তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরো অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন গতি আসায় বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

আগামী দিনগুলোতে রপ্তানি আয় আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১৭ সালে বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া তরান্বিত হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের মূল গন্তব্য তথা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরো অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে।

“আশার কথা হল, উদীয়মান ও উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি যেহেতু ঘুরে দাঁড়িয়েছে সেহেতু সামনের দিনগুলোতে আমাদের রপ্তানি খাত আরও গতিশীল হবে।”

এছাড়া টাকার বিপরীতে ডলারের দরবৃদ্ধি রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে অবদান রাখছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে ৫ শতাংশের বেশি। ছয় মাসে বেড়েছে ৩ শতাংশ।

আগামী জুন পর্যন্ত (চলতি অর্থবছর) রপ্তানি আয় বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি ফারুক হাসান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কারখানাগুলোর উন্নয়নে মালিকরা অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কষ্টও করেছেন। ৮০ শতাংশের বেশি কারখানা উন্নত কর্মপরিবেশের (কমপ্লায়েন্স) আওতায় চলে এসেছে। এতে বায়াররাও খুশি।

“যার ইতিবাচক ফল আমরা পাচ্ছি। সামগ্রিক রপ্তানিতে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। বাকি দুই মাসেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। এবার পোশাক রপ্তানি ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।”

ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাবের ঝুঁকি দেখছেন কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে ফারুক হাসান বলেন, “না, তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। আমরা ইতোমধ্যে বায়ারদের বুঝিয়েছি যে, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে, তা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। তাতে তারা আশ্বস্ত হয়েছেন। আগের মতোই পোশাকের অর্ডার দিচ্ছেন।”

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বড় ধসের পর অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল প্রতি মাসেই বেড়েছে রপ্তানি আয়।

বৃহস্পতিবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ তিন হাজার ৪০ কোটি ৬৪ লাখ (৩০.৪০ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে।

এই অংক গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দশমিক ৩০ শতাংশ কম। এই দশ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল তিন হাজার ৪৯ কোটি ৭০ লাখ (৩০.৪৯ বিলিয়ন) ডলার।

২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে দুই হাজার ৮৫৭ কোটি ৫২ লাখ (২৮.৫৭ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয় ২৯ শতাংশ, অগাস্টে রপ্তানি আয় বাড়ে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ। এই দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয় প্রায় ১৪ শতাংশ; লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বাড়ে ৮ শতাংশের বেশি। সেপ্টেম্বর শেষে সেই প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে নেমে আসে, লক্ষ্যমাত্রাও হোঁচট খায়।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২ হাজার ৫৩০ কোটি ৫৫ লাখ (২৫.৩০ বিলিয়ন) ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে নিটওয়্যার খাতের পণ্য রপ্তানিতে এক হাজার ২৫৪ কোটি ১১ লাখ ডলার এবং উভেন পোশাক রপ্তানিতে এক হাজার ২৭৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার আয় হয়েছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জুলাই-এপ্রিল সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৮৩ দশমিক ২২ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ।

এই দশ মাসে নিট খাতে রপ্তানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর উভেনে বেড়েছে ৬ দশমিক ৪২ শতাংশ।

অন্যান্য খাতে রপ্তানি

জুলাই-এপ্রিল সময়ে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৩২ শতাংশ। কৃষি পণ্য রপ্তানি ১৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়েছে।

ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। তামাক রপ্তানি বেড়েছে ২৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৩ শতাংশ।

তবে চা রপ্তানি কমেছে ৩৯ শতাংশের বেশি। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি ২০ দশমিক ৪৯ শতাংশ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি ১০ শতাংশ কমেছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার ৭৫০ কোটি (৩৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন) ডলার।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি থেকে তিন হাজার ৪৬৫ কোটি ৫৯ লাখ (৩৪ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করে, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি।