নয় মাসে ৬০ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি

চলতি অর্থবছরের নয় মাসে ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2018, 03:43 PM
Updated : 2 May 2018, 03:52 PM

ব্যাংকগুলো আমানতের সুদের হার বাড়ানোর পরেও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেনি। ফলে সরকারের ‘ঋণের বোঝা’ বেড়েই চলেছে।

এই বোঝা লাঘবে আবারও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) মোট ৬০ হাজার ১২৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। মেয়াদ পূর্তির পর গ্রাহকরা আসল তুলে নিয়েছেন ৮ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে এই নয় মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা।

গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) মোট ৭৫ হাজার ১৩৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল।

আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা ধার করার লক্ষ্য ধরেছিল। সে হিসাবে নয় মাসেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২২ শতাংশ বেশি ঋণ নিয়ে ফেলেছে সরকার।

পুঁজিবাজারের অস্থিরতা আর ব্যাংকে মেয়াদি হিসাবে সুদের হার কম থাকায় গত কয়েক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্র সাধারণের কাছে ‘বিনিয়োগের নিরাপদ ক্ষেত্র’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদ হার কিছুটা বাড়ানোর পরও সঞ্চয়পত্র বিক্রি খুব একটা কমেনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত ফেব্রুয়ারি থেকে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদ হার খানিকটা বাড়িয়েছে, কিন্তু মানুষ ব্যাংকের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না। নিরাপদ বিনিয়োগ ভেবে সঞ্চয়পত্রই কিনছে।”

 

সরকারের ঋণের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে বলে গত বছরের মে মাসে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

কিন্তু বাজেট অধিবেশনে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীসহ অন্যান্য মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরা অর্থমন্ত্রীর ওই ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করায় শেষ পর্যন্ত আর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হয়নি।

গত সোমবার আবারও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর ইঙ্গিত নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

ঢাকা চেম্বারের সঙ্গে এক প্রাক বাজেট আলোচনায় মুহিত বলেন, “আমাদের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশ বেশি। সাধারণত ব্যাংকের আমানতের সুদের হারের চেয়ে এর হার ১ শতাংশ বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের তার চেয়েও বেশি। আমরা এর আগেও একবার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু নানা বিষয় চিন্তা করে কমানো হয়নি।

“তবে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর বিষয়টি এখনও বিবেচনায় আছে। এটা পর্যালোচনা করা হবে।”

সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া পেনশনার এবং পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার এখন সাড়ে ১২ শতাংশের মতো। সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা বাড়ার পরও ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার এর চেয়ে বেশ কম।

বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে এর আগে ২০১৫ সালের ১০ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ হার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হয়েছিল।