রূপপুরের বিদ্যুৎ গ্রিডে নিতে ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নিরাপদে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে নিতে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকায় সঞ্চালন অবকাঠামো গড়ে তুলবে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকরয়টার্স
Published : 10 April 2018, 01:43 PM
Updated : 10 April 2018, 01:43 PM

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রায় ১০ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড ২০২২ সালের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।

এ জন্য ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশনের জন্য সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনকে)।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বৈঠকে এ প্রকল্পসহ ১৫ হাজার  ৬৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ের মোট ১৬টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এসব ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ৫ হাজার ৭০৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, প্রকল্প সাহায্য থেকে আসবে ৮ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে পাওয়া যাবে এক হাজার ২৩৫ কোটি টাকা।

সভার কার‌্যপত্রে দেখা যায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রাশিয়ার পর যুক্ত হচ্ছে ভারত। এ প্রকল্পটির ব্যয়ে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক হাজার ৫২৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, ভারতীয় ঋণ থেকে ৮ হাজার ২১৯ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির নিজস্ব তহবিল থেকে এক হাজার ২৩৫ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

রূপপুরের বিদ্যুৎ তিন বিভাগের (ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা) ১৩টি জেলার ৩৭টি উপজেলায় সরবরাহ করা হবে।

এজন্য ঢাকা জেলার ধামরাই ও সাভার উপজেলা, গাজীপুরের কালিয়াকৈর, মানিকগঞ্জের শিবালয়-ঘিওর-দৌলতপুর-মানিকগঞ্জ সদর, সাটুরিয়া ও সিংগাইর, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার-সদর, মির্জাপুর ও কালিহাতি, রাজবাড়ীর পাংশা ও বালিয়াকান্দি, ফরিদপুরের ভাঙ্গা-বোয়ালমারী ও মধুখালী এবং গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী ও মাকসুদপুর, রাজশাহী বিভাগের পাবনা জেলার ইশ্বরদী-সদর-সাঁথিয়া-সুজানগর-বেড়া ও আটঘরিয়া, নাটোরের বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর ও সিংড়া, সিরাজগঞ্জের তারাশ ও শাহজাদপুর, বগুড়ার নন্দিগ্রাম-বগুড়া সদর ও কাহালু এবং খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার খোকসা ও কুমারখালী, মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলায় এ সঞ্চালন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- ৬০৯ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ,  রূপপুর-ঢাকা (আমিনবাজার-কালিয়াকৈর) ১৫৪ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, রূপপুর-গোপালগঞ্জ ১৫০ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন স্থাপন, রূপপুর-বগুড়া ১০২ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন, রূপপুর-ধামরাই ১৫২ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন এবং রূপপুর বাঘাবাড়ি ৬০ কিলোমিটার ২৩০ কেভি সঞ্চালন ডাবল সার্কিট লাইন নির্মাণ।

বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে-

  • টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে জন প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প; এর ব্যয় ৪১০ কোটি ৩৪ লাখ টাক।
  • রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সিগন্যালিংসহ রেল লাইন সংস্কার ও নির্মাণ প্রকল্প; এর ব্যয় প্রায় ৩৩৬ কোটি টাকা।
  • শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন প্রকল্প। এর ব্যয় প্রায় ১৮৩ কোটি টাকা।
  • নারায়ণগঞ্জ বন্দর ও চট্টগ্রাম কালুরঘাটে মহিলা শ্রমজীবী হোস্টেল এবং পাঁচ শয্যার হাসপাতাল সুবিধাসহ শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প; এর ব্যয় ১১৫ কোটি টাকা।
  • বাংলাদেশ টেলিভিশনের কেন্দ্রীয় সম্প্রচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশন (প্রথম পর্যায়) প্রকল্প; এর ব্যয় প্রায় ৮৩ কোটি টাকা।
  • পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প; এর ব্যয় ৪১৭ কোটি টাকা।
  • মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া-গোবিন্দপুর এলাকা রক্ষা প্রকল্প; এর ব্যয় ৩৮৬ কোটি টাকা।
  • নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প; এর ব্যয় ৮৬৫ কোটি টাকা।
  • খুলনা শহরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প; এর ব্যয় ৯৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
  • জেলা মহাসড়কসমূহ যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প কুমিল্লা জোন; এর ব্যয় ৬৫৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
  • নেত্রকোণা (ঠাকুরাকাণা-কলমাকান্দা) জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প; এর ব্যয় ৩১০ কোটি টাকা।
  • এলেঙ্গা-ভুঞাপুর-চরগাবসারা সড়কের ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ও একটি কালভার্ট পুনঃনির্মাণ এবং আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প; এর ব্যয় ৯৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
  • গৌরীপুর-কচুয়া-হাজীগঞ্জ সড়কের যথযথ মানে উন্নীতকরণ প্রকল্প; এর ব্যয় ৭৮ কোটি টাকা।
  • বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ভবন নির্মাণ প্রকল্প; এর ব্যয় ২০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা
  • ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কেরানীগঞ্জ নির্মাণ প্রকল্প; এর ব্যয় প্রায় ৪৬৫ কোটি টাকা।