সোমবার বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ব্যাংক খাতের দুরবস্থা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “বিবিএসের তথ্য বিশ্লেষণ করে আমাদের মনে হয়েছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ থেকে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে।”
সরকারেরর চেয়ে কমিয়ে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলনের পেছনে কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জন্য ৭ দশমিক ৬৫ ভাগ প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করা হয়েছে তা অর্জন করার জন্য দেশে যে পরিমাণে বেসরকারি বিনিয়োগ হওয়া দরকার ছিল তা হয়নি।”
শ্রম জরিপে ২০১৬ সালের তুলনায় ২ লাখ কর্মসংস্থান বেশি হওয়ার তথ্য তুলে ধরে এর সঙ্গে শিল্পখাতে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন না।
“যেখানে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি এতো কম! ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ হার জিডিপির অনুপাতে মোটামুটি স্থবির। সে ক্ষেত্রে প্রশ্নটা আসে যে ম্যানুফেকচারিং খাতে এতো প্রবৃদ্ধি আসলো কোত্থেকে?”
জাহিদ হোসেন বলেন, “প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ দেখানোর মূল কারণ হচ্ছে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের বড় প্রবৃদ্ধি। ভোক্তার ব্যয় এতে চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করেছে। ব্যক্তি খাতের ভোক্তার ব্যয়টাই এখানে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে। প্রশ্ন যেটা থেকে যায়, এই ভোক্তা চাহিদা বাড়ার সূত্রটা কি?”
দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে ব্যাংকিং খাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংকের এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতির তদারকি বাড়াতে হবে। আবার ঋণ আদায়ে আইনগত ও আর্থিক কাঠামোর উন্নতি করতে হবে।
“রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট না থাকলেও খেলাপি ঋণ বেশি আছে। তবে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা যাচ্ছে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত মুদ্রানীতির উল্টোদিকে চলছে বলে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য কিছুটা সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করলেও শেষ পর্যন্ত ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) এক শতাংশ কমিয়ে উল্টো সম্প্রসারণমূলক করা হয়েছে।”
অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান বলেন, “এদেশ একবছরে দুই বার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরেও যেভাবে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে, সেটা এদেশের অর্থনীতির শক্তি।”