বোরো: কৃষকের বাড়ল ২ টাকা, মিলারের ৪ টাকা

চলতি বছর বোরো মৌসুমে ৩৮ টাকা কেজি দরে চাল এবং ২৬ টাকায় ধান কেনার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 April 2018, 09:15 AM
Updated : 8 April 2018, 03:10 PM

এই হিসাবে বোরো চাষিরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করে গতবারের তুলনায় কেজিতে দুই টাকা বেশি দাম পাবেন। আর মিলাররা সরকারের কাছে এবার চাল বিক্রি করে পাবেন গতবারের চেয়ে চার টাকা বেশি।

আগামী ২ মে থেকে ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত সরকারিভাবে এই ধান ও চাল সংগ্রহ করা হবে বলে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন।

সচিবালয়ে রোববার খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ায় সরকার এবার ১০ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করেছে।

এর মধ্যে আট লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, এক লাখ টন আতপ চাল এবং দেড় লাখ টন বোরো ধান (দেড় লাখ টন ধানে এক লাখ টন চাল পাওয়া যাবে) সংগ্রহ করবে সরকার।

এবার বোরো চালের উৎপাদন খরচ ৩৬ টাকা ধরা হয়েছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, উৎপাদন খরচের চেয়ে কেজিতে দুই টাকা বেশিতে ৩৮ টাকা কেজি দরে বোরো চাল কিনবে সরকার। আর আতপ চাল ৩৭ টাকা এবং বোরো ধান ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা হবে।

গত বছর ২৪ টাকা কেজি দরে ৭ লাখ টন ধান ও ৩৪ টাকা দরে ৮ লাখ টন চাল কিনেছিল সরকার। এবার মজুদ ভালো থাকায় অভ্যন্তরীণভাবে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কম ধরা হয়েছে। যা সংগ্রহ করা হবে, তার বেশিরভাগটাই চাল।

অসময়ে টানা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও তিন দফা বন্যায় গতবছর বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার শুল্ক কমিয়ে এনে ব্যাপক হারে চাল আমদানির পথে যেতে বাধ্য হয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি গুদামগুলোতে এখন ৯ লাখ ৬৯ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ৩ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন গম মজুদ আছে।

উৎপাদন কম হওয়ায় এবার সরকারিভাবে গম সংগ্রহ করা হবে না বলে জানান মন্ত্রী।

“গম বাইরে থেকে সরকারি-বেসরকারিভাবে আমদানি হয়। গতবার বেসরকারিভাবে ৪০ লাখ মেট্রিক টন এবং সরকারিভাবে প্রায় ৫ লাখ টন গম আমদানি হয়। মাত্র ১৩ লাখ মেট্রিক টন গম উৎপাদন হওয়ায় এবার আভ্যন্তরীণভাবে গম সংগ্রহ করব না।”

খাদ্যশষ্যের সরকারি মজুদ এখন গত ২০ বছরের ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ে’ রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমরা মোটা চাল সংগ্রহ করি। ঢাকার বাজারে মোটা চালের দাম ৪২ টাকা, মফস্বলে মোটা চালের দাম ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা।”

‘ধানে বিমুখ’ কৃষক

উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার পরেও ভালো দাম না পাওয়ায় অনেক কৃষকই যে উৎপাদন বিমুখ হয়ে পড়ছেন, সে কথা স্বীকার করেছেন খাদ্যমন্ত্রী।

এ কারণে ভোক্তাদের পাশাপাশি কৃষকদের স্বার্থের কথাও বিবেচনায় রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

“ভোক্তাদের পাশাপাশি কৃষকের স্বার্থের কথাও চিন্তা করবেন। কৃষকরা উৎপাদন বিমুখ হয়ে যাবে যদি তাদের উৎপাদন খরচ না আসে, অবশ্যই তাদের উৎপাদন খরচ আসতে হবে।

“লক্ষ্য করে দেখবেন গ্রামে চার বিঘা, পাঁচ বিঘা, ১০ বিঘা জমি আজকে পুকুর করে ফেলছে মাছ চাষের জন্য, ধানী জমিতে মাছ চাষ করছে। কারণ ধান উৎপাদন করে তার ওই রকম লাভ হচ্ছে না। একজন কৃষক ধান বা চাল বিক্রি করে সমস্ত খরচ নির্বাহ করে, সুতরাং তাদের স্বার্থের কথাও চিন্তা করবেন।”

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনি খাবার টেবিলে যখন খেতে বসেন তখন আপনার প্রত্যেকটা উপকরণ- ডাল, সবজি, মাংস, মাছ প্রত্যেকটা জিনিসের দাম ৫ থেকে ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর আপনি এখানে কৃষকদের স্বার্থের কথা চিন্তা করবেন না এটা তো হয় না।”

কৃষক ‍উৎপাদন না করলে বিদেশ থেকে আমদানি করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকবে না বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “দিন দিন উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধান কাটতে ৬০০-৭০০ টাকা ছাড়া দিনে একজন কামলা (শ্রমিক) পায় না। কামলা যেটা রাখে তাকে খাওয়া, এটা-ওটা দিতে হয়। সমস্ত খরচ হিসেব করে দেখেন, কৃষকের উৎপাদন খচর কত বৃদ্ধি পেয়েছে। তাকে যদি মূল্যই না দেন তাহলে কৃষক উৎপাদন বিমুখ হয়ে পড়বে।”

বাম্পার ফলনের পরেও চালের দাম কমছে না কেন- এ প্রশ্নে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চালের দাম ‘স্থিতিশীল’ আছে।

তিনি তথ্য দেন, পাইকারিতে মোটা চালের দাম ঢাকায় ৪২ দশমিক ৪৬ টাকা; রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগে ৩৭ টাকা, সিলেট বিভাগে ৩৬ টাকা, খুলনায় ৪০ টাকা এবং বরিশাল বিভাগে ৩৮ টাকা।

“যা মজুদ আছে তা গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও ওএমএসে চাল দিচ্ছি, এবার কাবিখায় যাচ্ছে। যে মজুদ আছে কোনো রমক অসুবিধার কোনো কারণ নাই। (ধানের) যে ফলন হয়েছে তাতে করে আমাদের কোনো রকম সমস্যায় পড়ায় কোনো কারণ নাই।”

গতবার আগাম বন্যার ফসলহানীর কারণে বোরো ধান-চাল সংগ্রহ করা যায়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এবার তিন লাখ টান আমন সংগ্রহের টার্গেট নেওয়া হলেও ছয় লাখ টন সংগ্রহ করা হয়েছে।

অন্যবারের মত এবারও বোরো সংগ্রহ অভিযানের সময় ওএমএস কর্মসূচি বন্ধ থাকবে বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।