নারায়ণগঞ্জে হচ্ছে দেশের প্রথম বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য থেকে উৎপাদন হবে বিদ্যুৎ; এই ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশে এটাই প্রথম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2018, 01:06 PM
Updated : 21 March 2018, 01:08 PM

জালকুড়ি এলাকায় এই বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বুধবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।

বিদ্যুৎ ভবনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা কয়েক বছর ধরে দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলোতে বর্জ্যভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্ট বসানোর চিন্তা-ভাবনা করছিলাম। (সিটি কর্পোরেশনের) মেয়রদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ আলোচনাও হয়েছে। নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন প্রথম এগিয়ে এসেছে। আশা করি, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে (প্রকল্পের) টেন্ডার আহ্বান হবে।”

নারায়ণগঞ্জের পর অন্য নগরীগুলোতেও এই ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলে জানান তিনি।

গত শতকের সত্তর-আশির দশক থেকে ইউরোপে বর্জ্যভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। পরে অন্য মহাদেশগুলোর বিভিন্ন দেশ এই পথে যাত্রা করে।

বাংলাদেশে বর্তমানে দিনে বিদ্যুতের চাহিদা সাড়ে নয় হাজার মেগাওয়াটের বেশি। এর বিপরীতে উৎপাদনও একই রকম। তবে চাহিদা দিন দিনই বাড়ছে।

নারায়ণঞ্জে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি হবে ৩-৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন। এই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন পড়বে ৩০০-৫০০ মেট্রিক টন ‘সলিড’ বর্জ্য।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে হিমশিম খাওয়া সিটি করপোরেশন এর মধ্য দিয়ে  একটা সমাধান খুঁজে পাবে বলে আশা করছেন মেয়র আইভী।

তিনি বলেন, “নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের একটা বড় সমস্যা হল বর্জ্য। বর্জ্যের কারণে শহরে ফাঁকা জায়গা, মাঠ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এই প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুন্দর হবে।”

আশুগঞ্জে চতুর্থ কম্বাইন সাইকেল প্লান্ট

আশুগঞ্জে ১৪শ ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার কম্বাইন সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনে একটি চীনা কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি করেছে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড।

মঙ্গলবার রাতে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ইপিসি চুক্তি করে এপিএসসিএল।

আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির অবকাঠামোর উৎপাদন ক্ষমতা ১৭৫৬ মেগাওয়াট, যা দেশের সার্বিক উৎপাদন ক্ষমতার ১৩ শতাংশ। এর মধ্যে ৪৫০ মেগাওয়াটের দুটি এবং ২২৫ মেগাওয়াটের একটি কম্বাইন সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট সিসিপিপি রয়েছে।

চতুর্থ সিসিপিপি আগামী তিন বছরের মধ্যে উপাদনে যাবে বলে আশা করছেন চীন ও বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।

এপিএসসিএলের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর একনেকের সভায় অনুমদিত হয়। এডিবি, আইডিবি ও বাংলাদেশ সরকারের সমন্বিত অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

২০১৬ সালের ১২ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হলেও চুক্তির পর্যায়ে আসতে সময় লাগে প্রায় দুই বছর। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসাবে চায়না ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট (সিএনটিআইসি) এবং চায়না ন্যাশনাল করপোরেশন ফর ওভারসিজ ইকোনমিক কো-অপারেশন (সিসিওইসি) কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তিটি করা হয়।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই এলাহী চৌধুরী, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, বিদ্যুৎ সচিব আহমেদ কায়কাউস, পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

এপিএসসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাজ্জাদুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

ইপিসি চুক্তির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪শ ৭৪ কোটি টাকা। এছাড়া পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৯৩১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন ১৫২ কোটি টাকা, সরকার ৪২০ কোটি টাকা খরচ করবে। বাকি খরচের মধ্যে এডিবি দেবে ১০৭ মিলিয়ন ডলার আর আইডিবি দেবে ২২০ মিলিয়ন ডলার। দুই প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ টাকার অংকে দাড়ায় ২ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা।

অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে আছে। অন্যান্য বিদ্যুৎ কোম্পানি ও সরকারি কোম্পানিগুলোকেও আইপিইউতে আসতে হবে। এতে মানুষ তাদের অর্থবিনিয়োগ করে যেমন লাভবান হবে, তেমনি কোম্পানিগুলোর কাজও আরও স্বচ্ছ হবে।