মানসিকতার পরিবর্তনই বড় চ্যালেঞ্জ: অর্থমন্ত্রী

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি মেলার পর মানসিকতার পরিবর্তনকেই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2018, 09:26 AM
Updated : 23 March 2018, 01:18 PM

বুধবার সচিবালয়ে ‘স্বল্পোন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের উত্তরণ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কথা বলেন তিনি।

জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) সম্প্রতি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি দেয়। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার শর্ত পূরণ করায় বাংলাদেশ এখন আনুষ্ঠানিক আবেদন করতে পারবে। সব ঠিক থাকলে   ২০২৪ সালে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে।

ওই স্বীকৃতি আসার পর প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী বলেন, “সারা দুনিয়ায় আমাদের বদনাম ছিল, আমরা গরিব। সে অবস্থা আর এখন…. আসমান আর পাতাল।... আমরা সাহায্যের জন্য হাত পাতি- সে কথা আমাদের শুনতে হয়েছে। আজ আমি খুব গৌরব বোধ করছি।”

উদ্দীপ্ত, হাসি-খুশী মুহিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আন্তর্জাতিক এ স্বীকৃতি উদযাপনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ কেবল আবেদন করার যোগ্য হয়েছে, এখনও অনেক পথ বাকি; তারপরও উদযাপনের এত আয়োজন কেন?

এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, “কেন নয়? আমরা অনেক নিচে ছিলাম; আমরা উপরে উঠছি এখন, আরও উপরে যাব। আমরা দেখিয়েছি আমরাও পারি। আমরা উৎসবপ্রিয় জাতি। তাই সবাইকে নিয়ে উদযাপন করব।”

সামনের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, “২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা এলডিসি থাকব। ২০১৮-২০২৪ সাল পর্যন্ত একটা ট্রানজিশনে থাকব। আমাদের মানসিকতাও পরিবর্তন করতে হবে। বেশি হারে আন্তর্জাতিক ঋণ নেওয়ার মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে।”

সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সামনের সব সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানোর ওপর জোর দেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “মানসিকতার পরিবর্তনে ইতোমধ্যে আমরা পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছি। কোন খাতে কত ঋণ নেব, সে বিষয়ে সাবধান হতে হবে।”

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনের বিষয়টি বাংলাদেশকে জাতিসংঘ জানায় ১৭ মার্চ। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ মিশনকে সেদিন ওই স্বীকৃতিপত্র হস্তান্তর করা হয়।

অর্থমন্ত্রী জানান, ওই স্বীকৃতিপত্র মঙ্গলবার দেশে এসেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তা হস্তান্তর করা হবে।

সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই স্বীকৃতির উদযাপন হবে ৭ দিন ধরে। ২০ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ উৎসব চলবে।

২২ মার্চ সকালে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হবে সংবর্ধনা, বিকালে রাজধানীর নয়টি অঞ্চল থেকে শোভাযাত্রা যাবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে; হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ওই সপ্তাহে সরকারের সব দপ্তর বা বিভাগ একটি সেবা ফ্রি দেবে।

 

মাথাপিছু আয়, মানবোন্নয়ন সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকের ভিত্তিতে তিন বছর পর পর স্বল্পোন্নত দেশগুলোর উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের আবেদন পর্যালোচনা করে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)।

একটি দেশের মাথাপিছু আয় কমপক্ষে ১২৩০ ডলার, মানবোন্নয়ন সূচকে স্কোর ৬৬ বা তার বেশি এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে স্কোর ৩২ বা তার কম হলে সেই দেশকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতির যোগ্য বিবেচনা করা হয়।

জাতিসংঘের হিসাবে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১২৭৪ ডলার, মানবোন্নয়ন সূচকের স্কোর ৭২.৯ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে স্কোর ২৪.৮ হওয়ায় বাংলাদেশ এ স্বীকৃতি পেয়েছে।

১৯৭৫ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির পর বাংলাদেশ এবারই প্রথম তিনটি সূচকে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণে সক্ষম হয়েছে।

২০২১ সালে সিডিপির ত্রি-বার্ষিক পর্যালোচনায় বাংলাদেশ যদি আবারও এ মানদণ্ডগুলোর কমপক্ষে দুটি পূরণ করতে পারে, সিডিপি তখন বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য সুপারিশ করবে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল তা অনুমোদন করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাঠাবে।

তিন বছর পর ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ স্বীকৃতির ফলে বাংলাদেশের জন্য দুই চারটি ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হলেও অনেক নতুন দুয়ার উন্মোচিত হচ্ছে। বিনিয়োগ, পুঁজিবাজার, জিএসপিসহ নতুন নতুন অনেক ক্ষেত্রে দরজা খুলে যাবে।  

মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান বলেন, “রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে।”

অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, ইআরডি সচিব শফিকুল আজম ও অতিরিক্ত সচিব মনোয়ার আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।