‘নিয়োগকারীর মানসিকতা ও পরিবার’ আটকে রাখছে নারীকে

বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশি নারী হলেও আর্থ-সামাজিক পরিবেশে নিয়োগকারীর মানসিকতা ও পারিবারিক ব্যস্ততায় কর্মবাজারে নারীর প্রবেশ তুলনামূলক কম বলে উঠে এসেছে সর্বশেষ শ্রম জরিপে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2018, 04:48 PM
Updated : 20 March 2018, 04:48 PM

এতে দেখা গেছে, এসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও অবস্থার উন্নতি ঘটাচ্ছে নারীরা। এক বছরেই শ্রমবাজারে প্রায় ৯ লাখ নারীর প্রবেশ ঘটেছে।

মঙ্গলবার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপের ফলাফল প্রতিবেদন আকারে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে প্রকল্প পরিচালক কবির আহাম্মদ বলেন, বর্তমানে দেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৯৩ লাখ। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা সংখ্যা ৫ কোটি ৪৯ লাখ, আর শ্রমবাজারে যুক্ত হয়েছেন ২ কোটি নারী।

এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জরিপে শ্রমবাজারে যুক্ত নারীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৯১ লাখ। এ হিসেবে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ।

কর্মক্ষম কিন্তু বেকার, খণ্ডকালীন কর্মী এবং এক মাসে কাজ খোঁজেনি এমন লোকের সংখ্যা ৬৬ লাখে নেমে এসেছে বলে এই জরিপে এসেছে। আগের বছর এ রকম বেকারের সংখ্যা ছিল ৭১ লাখ। 

এ তথ্যের ভিত্তিরত পূর্ণকালীন কাজে কর্মক্ষমতা ব্যবহারের হার বেড়েছে বলে দাবি প্রকল্প পরিচালকের; যদিও বেকারের সংখ্যা বেড়েছে।

জরিপে দেখা গেছে, দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ।

এক বছর আগে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ। এ হিসেবে বছরের ব্যবধানে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ। তবে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২০ শতাংশে অপরিবর্তিত রয়েছে।

বাংলাদেশে নারীদের বড় অংশগ্রহণ রয়েছে পোশাক শিল্পে

উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারেত্বের হার তুলনামূলক বেশি রয়েছে বলে দাবি করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বোচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১১ দশমিক ২ শতাংশ। বেকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে নারী ও পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান।

এছাড়া দেশের কৃষি খাতে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা কমেছে। বিপরীতে বাড়ছে শিল্প ও সেবা খাতের শ্রমশক্তির সংখ্যা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের মোট শ্রমশক্তির ৫৬ শতাংশ কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে নিয়োজিত রয়েছে, যা সংখ্যায় ৬ কোটি ৮০ লাখ। শ্রম শক্তির বাইরে রয়েছে ৪ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ।

তা ছাড়া মজুরি ছাড়াই কাজ করতেন এমন ১৪ লাখ মানুষ মজুরিভিত্তিক কাজে নিয়োজিত হয়েছেন; প্রবাসের শ্রমবাজারে যোগ দিয়েছেন আরও ১০ লাখ মানুষ।

প্রকল্প পরিচালক জানান, দেশে ধীরে ধীরে শ্রমের রূপান্তর ঘটছে। এক সময় কৃষি নির্ভরতা থেকে বর্তমানে সেবা ও শিল্পের দিয়ে যাচ্ছে কর্মসংস্থান।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে কৃষি খাতে নিয়োজিত ছিল ২ কোটি ৫৪ লাখ মানুষ। সেখান থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কমে গিয়ে শ্রমিকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৪৭ লাখ।

অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সেবা খাতে। গত অর্থবছরে সেবা খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ২ কোটি ৩৭ লাখ। তার আগের অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ২ কোটি ২০ লাখ।

এছাড়া শিল্প খাতে গত অর্থবছরে নিয়োজিত ছিল ১ কোটি ২৪ লাখ। তার আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২২ লাখ।

দেশে মোট কর্মসংস্থানের ৮৫ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতের। প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের সংখ্যা মাত্র ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। মোট কর্মসংস্থানের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের আনুষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই। প্রায় ১ কোটি ৫৭ লাখ কর্মজীবী মানুষের সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত। ১ কোটি ৮৭ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনো আর বাকিটা উচ্চ শিক্ষিত।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিবারে মজুরি ছাড়া কাজ করতেন এমন মানুষের সংখ্যাও দিন দিন কমছে। অর্থাৎ বেশি সংখ্যক নারী উপার্জন হয় এমন কাজে যুক্ত হচ্ছেন।

পরিসংখ্যান ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব সুরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সারা পৃথিবীর মতোই বাংলাদেশও কৃষি খাতে কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে। এই পরিবর্তন বৈশ্বিক।

“নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে কর্মক্ষেত্রে। এটি শুনতে ভালো লাগে। আমরা নারীদের ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। শ্রমশক্তি জরিপ সরকারের নীতি কৌশল প্রণয়নে কাজে আসবে।”

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “আমাদের সরকারের উন্নয়নের ফলে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হচ্ছি। ২০৪১ সালে আমরা উন্নত বিশ্বে উন্নীত হব। সে জন্যও সকল ধরনের পরিকল্পনা হচ্ছে।”