পদ্মার রেল সংযোগ প্রকল্পে চীনের অর্থায়ন কমছে

পিছিয়ে পড়া পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে চীন প্রায় চার হাজার কোটি টাকা কম দিচ্ছে।

জাফর আহমেদ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2018, 04:55 PM
Updated : 27 April 2018, 01:35 PM

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের চূড়ান্ত ঋণ চুক্তি চলতি মাসেই স্বাক্ষরিত হতে পারে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সম্প্রতি চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইআরডির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে চীনা কর্তৃপক্ষ জানায়, এ প্রকল্পের জন্য চীন তার প্রতিশ্রুত অর্থায়নের পরিমাণের চেয়ে ১৫ শতাংশ অর্থ কম দেবে।”

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ভাঙ্গা, নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেল সংযোগ প্রকল্পে অর্থায়নে ২০১৬ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় যে ২৭টি প্রকল্পে অর্থায়নে সমঝোতা চুক্তি হয়, এটি তার একটি।

প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন সরকারের ঋণ দেওয়ার কথা ২৫ হাজার কোটি টাকা (৩১৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার)। বাকি ১০ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যোগান দেওয়ার কথা।

কিন্তু এখন চীন তার প্রতিশ্রুত অর্থায়ন থেকে ১৫ শতাংশ কমিয়ে দিলে বাড়তি প্রায় ৩ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার যোগান দিতে হবে সরকারকেই। সেক্ষেত্রে আগের পরিমাণ যোগ করে মোট প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার ভার সরকারকে বহন করতে হবে।

জানতে চাইলে ইআরডির যুগ্ম সচিব ড. এ কে এম মতিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চীনা কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই এ প্রকল্পের ঋণচুক্তির জন্য সেদেশের স্টেট কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়ে আমাদের জানিয়েছেন।

“চলতি মাসের প্রথম দিকে চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের নেগোসিয়েশন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর চলতি মাসের শেষের দিকে প্রকল্পটির চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে।”

পদ্মায় সড়ক সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে, ইতোমধ্যে বসেছে তৃতীয় স্প্যান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সড়ক সেতু চালুর দিন থেকেই রেল চলাচলও উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে রেল মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি চিঠি পাঠায়।

তাতে বলা হয়, ২০১৯ সালে পদ্মায় রেল সেতু উদ্বোধন করতে হলে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু করতে হবে।

তাতে আরও বলা হয়েছিল, মে-জুন মাস থেকে বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় জানুয়ারি মাস থেকে কাজ শুরু করতে হবে। না হলে পদ্মা সড়ক ও রেল সেতু এক সাথে উদ্বোধন করা সম্ভবপর হবে না।

২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর মূল কাজ শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। সরকারের এই মেয়াদে অর্থাৎ এই বছরের মধ্যে পদ্মা সেতুতে গাড়ি পারাপারের আশা প্রকাশ করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

কিন্তু সড়ক সেতুর কাজ এগিয়ে পদ্মা সেতুতে এখন তৃতীয় স্প্যান বসলেও পিছিয়ে পড়েছে রেল প্রকল্পের কাজ।

সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২০ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

এরই মধ্যে রেলের চুক্তি না হওয়ায় এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ২৭ ডিসেম্বর ইআরডির কাছে চিঠি পাঠিয়ে চীনা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়।