বর্তমান বিনিময় হার (১ ডলার=৮১ টাকা) হিসেবে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩২৪ কোটি টাকা। অনুদানের এই অর্থ ‘জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্পে ব্যয় করা হবে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার জার্মানির রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক কেএফডব্লিউর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটি চুক্তি হয়েছে। গত নভেম্বরে জার্মানির বন শহরে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনের সময় বাংলাদেশে এই অর্থায়নের বিষয়ে কেএফডব্লিউর সঙ্গে চুক্তি করেন গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের নির্বাহী পরিচালক হাওয়ার্ড বামসে।
ওই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী কেএফডব্লিউর ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য রোলান্ড সিলার দুপুরে ঢাকার শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম স্বাক্ষর করেন।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ জানায়, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের (ইউএনএফসিসিসি) আওতায় ২০১০ সালে জিসিএফ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্যোগে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়।
তহবিল গঠনের সময় উন্নত দেশগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা সময়মতো পূরণ না হওয়ায় বিভিন্ন সময় অসন্তোষ জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কার্বন নিঃসরণের জন্য ততোটা দায় না থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তানের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ।
এই ফান্ড থেকে অর্থ সংগ্রহে বাংলাদেশের আরও মনোযোগী হওয়া উচিত বলে মনে করেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. এম আতিক রহমান।
সম্প্রতি ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের উদ্যোগে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিলিয়েন্স ফান্ড (বিসিসিআরএফ) এখন আসলে আর কার্যকর নাই৷ সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের মতবিরোধের কারণে ওই ফান্ড থেকে আর কোনো অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না৷
অন্যদিকে সরকার যে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট (বিসিসিটি) গঠন করেছে, সেখানেও আর আগের মতো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় না৷
“কারণ এই ফান্ডের টাকার ব্যবহার নিয়ে সরকার এবং সরকারের বাইরে নানা রকম কথা আছে৷ প্রকল্পগুলো নিয়ে নানা আলোচনা আছে৷ পত্রিকায় নানা প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে৷ টিআইবি গবেষণা করে দেখেছে৷ এই ফান্ডের প্রকল্পগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷”
এ অবস্থায় বাংলাদেশের জন্য এখন গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) একমাত্র ভরসা মন্তব্য করে বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের (বিসিএএস) নির্বাহী পরিচালক আতিক বলেন, “বাংলাদেশ এখন আর এর সদস্যপদে না থাকলেও এখান থেকে ফান্ড পেতে কোনো বাধা নাই৷ আর বাংলাদেশ এখন জিসিএফের ফান্ড পাওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷”
তিনি বলেন, “যারা এখন আমাদের টাকা দিতে চায়, তারা গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডেই টাকা দিচ্ছে৷ কোরিয়ার এর সদর দপ্তর৷ এরইমধ্যে ১২-১৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার সেখানে জমা পড়েছে৷ এটা একটা বিশাল ফান্ড৷ ২০২০ সাল থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে৷
“কিন্তু বাংলাদেশকে এই ফান্ড আনতে হলে প্রজেক্ট সাবমিট করে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আনতে হবে৷”
কেএফডব্লিউ ও ইআরডির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের পর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ছয় বছর মেয়াদি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এর আওতায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ ও সংস্কার, দুর্গম উপকূলীয় এলাকায় রাস্তা নির্মাণ, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ নগরবাসীর নিরাপত্তায় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এছাড়া আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য ও দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতিমূলক তথ্যের জন্য একটি জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো উৎকর্ষ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে প্রকল্পের আওতায়।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ভূমিকা অতি নগণ্য। অথচ বাংলাদেশই জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির সম্মুখীন।