চড়া সুদে আমানত নয়: গভর্নর

চড়া সুদে আমানত সংগ্রহ না করতে ব্যাংকগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2018, 02:38 PM
Updated : 26 Feb 2018, 01:14 PM

শনিবার রাজধানীতে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি বলেন, “ব্যাংকিং খাতে কোনো তারল্য সংকট নেই। কাজেই আগ্রাসী হয়ে চড়া সুদে আমানত না নেওয়ার জন্য আমি ব্যাংকারদের অনুরোধ করছি।”

একটি বেসরকারি ব্যাংকে তারল্য সংকটের কারণে পুরো ব্যাংকিং খাতে কিছু মানুষ অস্থিরতা সৃষ্টির সুযোগ খুঁজছে মন্তব্য করে গভর্নর বলেন, “ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) নিয়ে ব্যাংক খাতে অহেতুক প্যানিক (আতঙ্ক) সৃষ্টি হয়েছে। এর কোনো কারণ আমি দেখছি না, এটি অত্যন্ত অমূলক আশঙ্কা।”

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুছুর রহমান, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস উল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

হোটেল লো মেরিডিয়ানে অনুষ্ঠানের শুরুতেই শামস উল ইসলাম ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে কেবল অগ্রণী ব্যাংকে কোন মূলধন ঘাটতি নেই। আমানত সংগ্রহ হয়েছে ভালো। ২০১৭ সালে প্রায় দ্বিগুণ পরিচালনা মুনাফা করেছে ব্যাংকটি।

অগ্রণী ব্যাংকের অবস্থা ভালো হলেও সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতের অবস্থা মোটেও ভালো নয়; খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। নিয়ম ভেঙে জনতা ব্যাংক একটি শিল্পগোষ্ঠীকে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দেওয়ায় বেশ সামালোচনার মুখে পড়েছে সরকার।

এছাড়া ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ কেলেংকারিও সরকারকে দুরাবস্থায় ফেলেছে। জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যরাও ব্যাংকিং খাত নিয়ে সমালোচনা করেছেন। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এডিআর কমানোও নিয়ে বেশ সমালোচনা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে বুধবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ভাগের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গভর্নর ফজলে কবির।

এ পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অগ্রণী ব্যাংকের সম্মেলনে গভর্নর ব্যাংকিং খাতে তারল্যের বিষয়ে আশ্বস্ত করে বলেন, “বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান টাকা তুলে ফেলছে। শেয়ারবাজারের আতঙ্ক ব্যাংকে ছড়িয়ে পড়ছে। এ ব্যাপারে আমি মাননীয় অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৩ সালে ব্যাংক খাতে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ধারাবাহিকভাবে এটা কমতে কমতে গত বছরের নভেম্বরে তা ৪ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছিল।

কিন্তু এডিআর কমানোর পর ব্যাংকগুলো এখন চড়া সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। ফেব্রুয়ারি থেকে সব ব্যাংকই তাদের আমানতের সুদের হার বাড়িয়েছে।

বেসরকারি সাউথবাংলা এগ্রিকালচারাল ব্যাংক তাদের ডিপিএসের সুদের হার বাড়িয়ে ১১ শতাংশ করেছে। এই ব্যাংকটির এফডিআরের সুদের হার এখন ৯ দশমিক ৫ শতাংশ।

এবি ব্যাংক মাসিক সঞ্চয় আমানত স্কিমের সুদ হার ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ করেছে। অন্যান্য ব্যাংকও প্রায় একই হারে তাদের আমানতের বিভিন্ন স্কিমের সুদের হার বাড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকিং খাতে সব মিলিয়ে এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ সোয়া লাখ কোটি টাকা।

২০১৬ সালে অগ্রণী ব্যাংকের লোকসানী শাখা ছিলো ৭৮টি, যা ২০১৭ সালে কমে ৪৩টিতে নেমে এসেছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।