লোকসান গুনছে বাঙালি ও মধুমতি

দৃষ্টিনন্দন, ‍সুবিধাও বেশি, তারপরও প্রতিদিন লাখ টাকা লোকসান গুনছে সরকারি মালিকানার যাত্রীবাহী দুটি জাহাজ বাঙালি ও মধুমতি; অথচ একই রুটের বেসরকারি লঞ্চগুলো লাভ করছে।

জাফর আহমেদ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2018, 05:37 AM
Updated : 15 Feb 2018, 06:05 AM

বাঙালি ২০১৪ সালের শেষ দিকে এবং মধুমতি ২০১৫ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা বিআইডাব্লিউটিসির বহরে যুক্ত হয়।

জাহাজ দুটিতে যাত্রী পরিবহন করে প্রতিবছর ৭ কোটি টাকা লাভ হবে বলে ধরা হয়েছিল; কিন্তু এখন উল্টো ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।

সরকারের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে সরকারি জাহাজ দুটির লোকসানের এই চিত্র উঠে আসে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন এ জাহাজ দুটিতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তার সুব্যবস্থা থাকলেও কাঙ্ক্ষিত যাত্রী না পাওয়ায় প্রতিদিন ১ থেকে ২ লাখ টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে।

“অনুমোদনের পুর্বে প্রকল্পটির প্রস্তাবনায় জাহাজ দুটির বাৎসরিক রাজস্ব আয় ধরা হয়েছিল ১৯ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২ কোটি ৬৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। নিট আয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।”

এই পরিস্থিতিতে রাজস্ব আয় বাড়াতে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিআইডাব্লিউটিসিকে।

২০১২ সালে ৪৫ কোটি ২১ লাখ টাকায় জাহাজ দুটি তৈরির জন্য একটি প্রকল্প নিয়েছিল নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। পরে ব্যয় বেড়ে ৫৪ কোটি ৩০ লাখ টাকায় ওঠে।

সাড়ে ৭৬ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ দুটি বানিয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ণ মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড।

বিআইডাব্লিউটিসি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প সমাপ্তির প্রতিবেদন ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে পাঠানোর পর গত মাসে পরিদর্শনে যায় আইএমইডি।

পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহাজ দুটিতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ও নিরাপত্তার সুব্যবস্থা রয়েছে। ৭৬০ জন যাত্রী ধারণ ক্ষমতার প্রতিটি জাহাজে রয়েছে ভিআইপি কেবিন, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কেবিন। প্রতিটি জাহাজে রয়েছে একটি করে কনফারেন্স রুম ও একটি ডাইনিং রুম।

“এছাড়া নিরাপত্তার জন্য রয়েছে রাডার জিপিএস লাইফ জ্যাকেট এবং ইলেক্ট্রোহাইড্রলিক রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেম। জাহাজের ভারসাম্যের জন্য ডাবল বোটল সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে সহজে জাহাজ উল্টাবে না। এছাড়াও এ জাহাজ দুটি ঘন কুয়াশার মধ্যেও কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে।”

লোকসান কেন?

বেসরকারি লঞ্চগুলোর চেয়ে সরকারি এই জাহাজ দুটিতে সুবিধা বেশি থাকার পরও কেন লোকসান হচ্ছে, সেজন্য আইএমইডির পরিদর্শনে কিছু কারণ ধরা পড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে

প্রথমত, জাহাজ দুটির জেটি সদরঘাটের মূল টার্মিনাল থেকে অনেক দূরে। ফলে যাত্রীরা দূরে এসে জাহাজে উঠতে চায় না।

সদরঘাটের এই জেটি থেকে ছাড়ে লঞ্চগুলো; বাঙালি ও মধুমতি ছাড়ে দূরের জেটি থেকে

দ্বিতীয়ত, অন্যান্য জাহাজে প্রচারের ব্যবস্থা থাকলেও সরকারি জাহাজগুলোর জন্য প্রচারের কোনো ব্যবস্থা নেই।

তৃতীয়ত, প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় নির্দেশিত রুট অনুযায়ী জাহাজ দুটি চলাচল করছে না। এখন প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়। এরপর চাঁদপুর হয়ে বরিশাল পৌঁছায় রাত ৪টায়। ফলে ভোর হওয়া পর্যন্ত যাত্রীদের জাহাজে বসে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এসব কারণে জাহাজ দুটিতে আশানুরূপ যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ রাত ৮টায় জাহাজটি ছাড়লে সকাল ৬টায় বরিশাল পৌঁছাবে। সেক্ষেত্রে যাত্রী বাড়বে।

এ বিষয়ে কথা বলতে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাহজান খানের সঙ্গে কয়েক দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায় নি। 

বিআইডাব্লিউটিসির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব প্রণয় কান্তি বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, লাভ চিন্তা করে এই জাহাজ দুটি পরিচালনা করছেন না তারা।

“সরকারের কাজ জনগণকে সেবা দেওয়া, ব্যবসা করা সরকারের উদ্দেশ্য নয়। তাই লোকসান হলেও আমরা এ বিষয়ে চিন্তিত নয়। বরং যাত্রীদের যথাযথ সেবা নিশ্চিত হচ্ছে কি না, তা দেখাই আমাদের দায়িত্ব। অর্থ আয় নয়।”