মাছ-মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ

উৎপাদন বাড়ায় মাছ ও মাংসে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2018, 06:45 AM
Updated : 11 Feb 2018, 08:28 AM

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সুখবর দেন।

মন্ত্রী বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা অনুযায়ী একজন মানুষের দিনে অন্তত ৬০ গ্রাম মাছ খাওয়া প্রয়োজন। আর একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিনি ১২০ গ্রাম মাংসের প্রয়োজন।

“দেশে বর্তমানে দৈনিক মাথাপিছু মাংসের প্রাপ্যতা ১২১ দশমিক ৭৪ গ্রাম, যা চাহিদার তুলনায় বেশি। ফলে চাহিদা অনুযায়ী মাংস উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে।”

আর মৎস্য খাত বর্তমানে দেশের মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপির ২৪ দশমিক ৪১ শতাংশের যোগান দিচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর বাংলাদেশ আজ মৎস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

মৎস্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ সালে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছে ৪১ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন, যা ২০০৮-০৯ অর্থ বছরের থেকে ৫৩ শতাংশ বেশি।

আর ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৭১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যাত্রার বিপরীতে ৭১ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৬ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ জলাশয় থেকে মৎস্য আহরণে বিশ্বে চতুর্থ এবং মাছ চাষে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে।

“মাছে ভাতে বাঙালি ঐতিহ্য আমরা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।”

মন্ত্রী বলেন, তেলাপিয়া, কৈ, পাবদা, গুলশা, শিং ও মাগুর মাছের উৎপাদনের ক্ষেত্রে ‘এক নীরব বিপ্লব’ সাধিত হয়েছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় সিলভার কার্প, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া ও কৈ মাছ এখন প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে।

বদ্ধ জলাশয়ে নিবিড় মৎস্য চাষ, নিয়মিত পোনা অবমুক্ত করা, মৎস্য অভয়াশ্রম ও সমাজভিত্তিক মৎস্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশবান্ধব চিংড়ি ও মৎস্যচাষের সম্প্রসারণ, মাছের আবাসস্থল পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন, প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা, প্রজননক্ষম মাছের কৌলিতাত্ত্বিক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার ফলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান নারায়ন চন্দ্র চন্দ।

তিনি বলেন, প্রকৃত মৎস্যজীবী ও জেলেদের অধিকার নিশ্চিত করতে মৎস্য অধিদপ্তর ইতোমধ্যে ১৬ লাখ ২০ হাজার মৎস্যজীবী ও জেলেদের নিবন্ধন শেষ করে ১৪ লাখ ২০ হাজার জেলেকে রিচয়পত্র দিয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্যও এ সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন মন্ত্রী।

একজন সাংবাদিক মাংস ব্যবসায়ীদের উদ্ধৃত করে মন্ত্রীকে বলেন, গরুর খামার কমে যাওয়ায় ঢাকায় মাংসের দোকান ৬৭২টি থেকে ২২৮টিতে নেমে এসেছে।

জবাবে মন্ত্রী বলেন, গরুর খামার কমার তথ্য সঠিক নয়। আর মাংস বলতে শুধু গরু নয়, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি, মহিষ সবই বোঝায়। উৎপাদন বেড়েছে সার্বিকভাবে।  

দাম বেড়ে যাওয়ায় কেউ গরুর মাংস কম খেলেও মুরগির মাংস সেই জায়গা পূরণ করছে বলে মনে করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী।

মাংস বিক্রেতারা বলে আসছেন, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে গরুর মাংসের দাম কেজিতে ৩০০ টাকার নিচে রাখা সম্ভব। এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ আছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ১৫ মার্চের মধ্যে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সভার পর মাংসের দাম কমে আসবে বলে তিনি আশা করছেন।

রোজা ও কোরবানি ঈদের সময় গরু আমদানি করা হবে কি না- এ প্রশ্নে নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, দেশি গবাদিপশুতে চাহিদা মিটলে আমদানি করা হবে না।

ইলিশের উৎপাদন গতবছর ৬৬ শতাংশ বেড়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, চাহিদা পূরণের পর বাড়তি থাকলে ইলিশ রপ্তানির পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. রইছউল আলম মণ্ডল ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।