চালের কেজি ৪০ টাকায় একমত মুহিতও

চালের দাম সর্বনিম্ন ৪০ টাকা রাখার ক্ষেত্রে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যে সমর্থন জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2018, 10:26 AM
Updated : 2 Feb 2018, 02:25 PM

শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী সঠিকই বলেছেন, চালের দাম ৪০ টাকার মধ্যে থাকবে। সেই ৪০ টাকা থাকাটা আমার মনে হয় উচিৎ।”

হাওরে আকস্মিক বন্যা এবং পরে উত্তরাঞ্চলে বন্যার মধ্যে গত বছরের মাঝামাঝিতে সরকারের চাল মজুদ তলানিতে ঠেকার পর দাম হু হু করে বেড়ে যায়।

এরপর আমদানি বাড়িয়ে দিলেও চালের দাম আগের পর্যায়ে নামেনি। সরকারি সংস্থা টিসিবির শুক্রবারের ঢাকার বাজার দরেও সবচেয়ে কম দাবি চালের কেজি ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা দেখানো হয়।

কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া নিশ্চিতের জন্য অর্থমন্ত্রী এর আগেও চালের দাম বেশি হওয়ার পক্ষে বলেছিলেন; তবে দাম বাড়লেও তার ভাগ কৃষক পায় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

মুহিত বলেন, খাদ্য উৎপাদন ব্যয় এবং ক্রেতার ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করে চালের কেজি ৪০ টাকা শ্রেয় মনে করছেন তিনি।  

চালের উচ্চ মূল্য নিয়ে সমালোচনার মধ্যে উৎপাদনে ‘কৃষকের আগ্রহ ধরে রাখতে’ চালের দাম ৪০ টাকার নিচে না নামানোর পক্ষে বৃহস্পতিবার মত জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল।

তিনি বলেন, “আমার ব্যক্তিগত মতামত, ৪০ টাকার নিচে কখনও চালের দাম আর আসবে না। … এটা (চালের দাম ৪০ টাকার নিচে হওয়া) বাস্তবসম্মতও না।”

একদিন বাদেই ওসমানী মিলনায়তনে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রিসভার সহকর্মীকে সমর্থন জানান মুহিত।

চাল নিয়ে সরকার এখন ‘স্বস্তির’ মধ্যে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের এবারের যে সঙ্কট, সেটাকে সঙ্কট বলা উচিৎ হবে না; এটা একটি সাময়িক সমস্যা। সমস্যার সমাধান আমাদের খাদ্য মন্ত্রণালয় করে দিয়েছে ইতোমধ্যে। তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত আমদানি করেছে।”

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের উপস্থিতিতে ওই অনুষ্ঠানে চাল ও গম আমদানি করেও বাংলাদেশ কীভাবে খাদ্যে ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ’ সেটার ব্যাখ্যা দেন মুহিত।

তিনি বলেন, “আমরা বলি, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কেউ কেউ সেখানে বলেন, যদি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণই হলেন, তাহলে কেন আপনারা আটা অথবা গম আমদানি করেন?

“এটা একটি অনুধাবনের বিষয়। আমরা চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং স্বয়ংসম্পূর্ণের চেয়ে বেশি। আমরা চাল রপ্তানি করতেও সক্ষম। আমরা প্রচুর ভুট্টা উৎপাদন করি, আটা হয়ত কম- দেড় লাখ টনের বেশি আমরা গম উৎপাদন করতে পারি না। সবমিলিয়ে যদি আমরা নিই, তাহলে আমরা সত্যিকারভাবে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাদ্য শুধু চাল না; ভুট্টা, গম, মাছ, সবজি, ফল- সবই খাদ্য। একটা যখন যথাযথভাবে পাওয়া যায় না, আরেকটি দিয়ে ক্ষুধা নিবৃত্তি করা যায়।“

নিরাপদ খাদ্য দিবসের অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পাশে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম

বছরে ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজিতে চাল সরবরাহে সরকারের প্রকল্পের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “এবার বোধহয় খাদ্যমন্ত্রীর চাপে পড়ে আমরা এটাকে ১০টাকায় সরবরাহ করছি। এটা হচ্ছে মানুষের জীবন রক্ষার জন্য। সুতরাং, আমার মতে, এখানে আপত্তি করার কারণ নাই এখন। আমাদের সামর্থ্য আছে, আমরা ভর্তুকি দিতে পারি।“

এই প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, “আমরা মাঝেমধ্যে হয়তো ধাক্কা খাই, প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে। তবে আমরা সেটা মোকাবেলা করতে পারি।”

গত বছর হাওর এলাকায় ঢল এবং উত্তরাঞ্চলে বন্যাফ ফসলহানি ঘটলেও কৃত্রিমভাবে সঙ্কট তৈরি করা হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ সংক্রান্ত আইন ও সেটা বাস্তবায়নে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলার প্রসঙ্গ অনুষ্ঠানে টানেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “জনগণকে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে সচেতন করার কাজ আমরা করছি। বাংলাদেশের মানুষ যেন নিরাপদে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে, সে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণসহ সব জায়গায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই আমরা।”

ভারপ্রাপ্ত খাদ্য সচিব শাহবুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ দারা, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশ উপ-প্রতিনিধি ডেভিড ডুলান বক্তব্য দেন।

সারাদেশে উদযাপনের অংশ হিসাবে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবসের শোভাযাত্রা শেষে মিলনায়তনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ উপলক্ষে ওসমানী মিলনায়তনের প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছে দিনব্যাপী মেলার।