এখন আমানত বাড়াতে হবে ব্যাংকগুলোকে

মুদ্রানীতির ঘোষণায় গভর্নর এডিআর সমন্বয় করতে বলায় ব্যাংকগুলোকে এখন আমানত বাড়াতে হবে।

আবদুর রহিম হারমাছিও রিফাত রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2018, 02:33 PM
Updated : 29 Jan 2018, 02:58 PM

সোমবার চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন মেয়াদের মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় অবশ্য গভর্নর ফজলে কবির এডিআর (ঋণ-আমানত অনুপাত) কী পরিমাণ কমানো হবে, তা স্পষ্ট করেননি।

দু-এক দিনের মধ্যে এডিআরের নির্ধারিত সীমা কমানোর সার্কুলার জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সেই অনুপাত অনুসরণ করতে হবে ব্যাংকগুলোকে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) কমানো ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘উপায় ছিল না’ বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

মুদ্রানীতির প্রতিক্রিয়ায় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেশ কিছু ব্যাংক আগ্রাসী ব্যাংকিং করেছে। আমানত না বাড়িয়ে ঢালাও ঋণ বিতরণ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর লাগাম টেনে না ধরলে ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।”

মুদ্রানীতি ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ফজলে কবির

২০টি ব্যাংক নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, “এই ব্যাংকগুলোকে তাদের অতিরিক্ত ঋণ অবশ্যই সমন্বয় করতে হবে এবং তা আগামী ৩০ জুনের মধ্যে করতে হবে। আমানত বাড়িয়ে এই সমন্বয় করতে হবে।

“আর নতুন যে ঋণ বিতরণ করা হবে, সেটা অবশ্যই দেখে-শুনে করতে হবে। বিতরণ করা ঋণ যাতে উৎপাদনশীল খাতে যায়, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।”

বর্তমানে ব্যাংক খাতে সাধারণ ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) ৮৫ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ নির্ধারিত আছে।

অর্থবছরের দ্বিতীয় মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

প্রথম মুদ্রানীতিতে যে লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধরেছিল, ব্যাংকগুলো তার অনেক বেশি ঋণ দিয়ে ফেলায় এই সীমা বাড়াতে হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।

ব্যাংকে লেনদেন (ফাইল ছবি)

মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে গত ৩ জানুয়ারি ব্যাংকার্স সভায় এডিআর কমানোর আলোচনা হয়েছিল। সেই সভা শেষে ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ঋণ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসেবে প্রথাগত ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর ) ৮৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮৮ শতাংশ করতে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে।

কিন্তু ওই সভার পর ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স (এবিবি) গভর্নরের কাছে চিঠি দিয়ে এডিআর না কমানোর অনুরোধ করেছিল।

তাতে কিছুটা নমনীয় হয়ে প্রথাগত ব্যাংকগুলোর এডিআর ৮৩ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৮৯ শতাংশ করা হচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান। 

ব্যাংকাররা বলে আসছেন, ঋণ দেওয়ায় লাগাম টানলে তাতে বিনিয়োগ ব্যাহত হয়ে সরকারের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

গভর্নরের কাছে পাঠানো চিঠিতে এবিবি বলেছিল, নির্বাচনী বছরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সরকারি খাতে ঋণ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বাড়তে পারে। তাই সীমা কমানো যুক্তিযুক্ত হবে না।

মুদ্রানীতি ঘোষণার পর এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এডি রেশিও কমানো হলে বেসরকারি খাতের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না।”

এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

তবে ঋণ প্রবাহ ১৬ দশমিক ৮ শতাংশের রাখার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তাতে বাজেটে ঘোষিত ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ‘যথেষ্ট’ মনে করেন মির্জ্জা আজিজ।

তিনি বলেন, “মুদ্রানীতি তৈরির আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের সঙ্গে যে বৈঠক করেছিল, তাতে আমিও এডি অনুপাত কমানোর কথা বলেছিলাম। সে কারণেই আমি বলছি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঠিক কাজটিই করছে।”

মুদ্রানীতি ঘোষণার আগের দিন এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বলেছিলেন, “ব্যাংকিং খাতে এডিআর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই অনুপাত সাধারণ মাত্রার চেয়ে উঁচুতে আছে, যা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।”

এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছিলেন, “কারণ আপনারা সবাই জানেন এ বছর নির্বাচনের বছর। এ বছর টাকা-পয়সার ছড়াছড়ি বেশি হবে, কালো টাকা হয়ত যথেষ্ট আসবে বাজারে, এ বছর সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।”

মির্জ্জা আজিজও বলেন, “এখন যে বিষয়টির দিকে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে সেটি হল, ঋণের গুণগত মান। ভালো ঋণ বিতরণ করতে হবে। নতুন ঋণ যাতে উৎপাদনশীল খাতে যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এবং এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি জোরদার করতে হবে।”