বিডিএফ সম্মেলনে মিলেছে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি: মুহিত

চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অগ্রাধিকার অনুযায়ী দাতারা অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2018, 06:58 PM
Updated : 18 Jan 2018, 06:58 PM

বৃহস্পতিবার দুদিন ব্যাপী বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম (বিডিএফ) শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বিডিএফ সম্মেলনে বিশ্ব ব্যাংক ও এডিবির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও সব দাতা দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এবারের সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। এবার প্রায় ৪০০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। বর্তমান সরকারের এটাই শেষ বিডিএফ সম্মেলন। পরবর্তী সম্মেলন ২০১৯ সালে হতে পারে।

তিনি বলেন, “সম্মেলনে আমরা দাতাদের কাছে এসডিজি ও পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি অর্থায়নে। কারণ এসডিজি বাস্তবায়নে ট্রিলিয়ন ডলার (এক হাজার বিলিয়ন) ডলারের প্রয়োজন। এ বিপুল অর্থ জোগানের বিষয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম। কিন্তু দাতারা অর্থ জোগানের বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।”

“সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নের সময়ও আমরা প্রতিশ্রুত অর্থ কিন্তু পাইনি। তারপরও আমরা অর্জন করেছি,” বলেন মুহিত।

তিনি বলেন, সম্মেলনে এসডিজির অর্থায়নের পাশাপাশি বাস্তবায়ন সক্ষমতা নিয়েও কিছু কথা হয়েছে। তবে সবাই একমতও হয়েছে যে এখন প্রত্যক দেশেরই বাস্তবায়নের সক্ষমতা বেড়েছে।

মুহিত বলেন, “আমরা ইতোমধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। আগামীতে আমাদের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসতে পারে। তবে আমরা সমন্বয় করার জন্য আরও ছয় বছর সুযোগ পাব। তবে আমরা এখন থেকে কার্যক্রম শুরু করছি।

“আমি ইতোমধ্যেই এবিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের কাছে একটি দরখাস্ত লিখেছি।”

অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ইআরডি সচিব কাজী সফিকুল আজম বলেন, “আগামী মার্চে আমরা এলডিসি তালিকা থেকে বের হয়ে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার ঘোষণা দিতে পারব বলে আশা করছি। মধ্যম আয়ের উন্নীত হতে যে তিনটি শর্ত আছে, সে শর্তগুলো আমরা পূরণ করতে পেরেছি।”

তিনি বলেন, “মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলে একদিকে সস্তা ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমে যাবে। কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতিতে আমাদের দর কষাকষির সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হবে।”

ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মনোয়ার আহমেদ বলেন, “আমরা মধ্যমে আয়ের দেশে উন্নীত হলে সস্তা ঋণ না পাওয়া নিয়ে আমরা ভাবছি না। কারণ এখনও আমরা এডিবির কাছ থেকে আমরা নমনীয় ঋণের বাইরে আছি। আমরা সেটা ভালোভাবেই মেটাতে পারছি। ঋণ পরিশোধসহ সার্বিকভাবে ঋণ ব্যবস্থাপনায় আমরা ভালো একটা অবস্থানে আছি।”

ইআরডি সচিব বলেন, “সম্মেলনের আটটি সেশনে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার বিষয়ে আমরা দাতাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছি। তাদের পরামর্শ আমাদের কৌশলে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

“মধ্য আয়ের দেশের কাতারে গেলে আমাদের চ্যালেঞ্জের চেয়ে সুযোগ বেশি আছে। বর্তমানে আমাদের বিনিয়োগ জিডিপির ৩০ ভাগের মতো। কিন্তু আমরা মধ্যম আয়ের দেশে গেলে অনেক বেশি বিনিয়োগ আনার সুযোগ তৈরি হবে। আমরা সেই সুযোগ নিতে চাই।”

এবারের সম্মেলনে ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওফিড) এর মহাপরিচালক সুলেইমান জাসির-আল-হারবিশ, বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট এনেট ডিক্সন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েনচাই ঝ্যাং, জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ মহা পরিচালক মিনরু মাসুজিমা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সম্মেলনে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূরীকরণ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতেযে নীতি কাঠামো বা অতিরিক্ত সম্পদ বা অর্থায়নের প্রয়োজন হতে পারে তা অর্জনের উপায় নিয়ে আলোচনা হয় সম্মেলনে।

মূল অধিবেশনের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নঃ প্রতিবন্ধকতাসমূহ ও ভবিষ্যৎ করণীয়সমূহ’।