ধনী আরও ধনী, গরিব আরও গরিব হচ্ছে: সিপিডি

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়ে চললেও ধনী-গরিব বৈষম্য না কমে বরং বেড়েছে বলে পর্যবেক্ষণ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডির।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2018, 10:15 AM
Updated : 13 Jan 2018, 01:17 PM

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, প্রবৃদ্ধির ‘গুণগত মানের অভাবে' ধনী-গরিবের সম্পদ বৈষম্য আরও বেড়েছে। কমেছে দারিদ্র্য হ্রাসের হার।

শনিবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে 'বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০১৭-১৮: প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সিপিডি।

এতে জানানো হয়, ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে মানুষের আয়ের বৈষম্য বেড়েছে। ২০১৬ সালে দেশের মানুষের মোট আয়ের ০.২৩ শতাংশ আসে সবচেয়ে দরিদ্রদের পাঁচ ভাগ থেকে, যা ২০১০ সালে ছিল ০.৭৪ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৬ সালে মোট আয়ে সবচেয়ে ধনী পাঁচ শতাংশের অবদান ২৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ, যা ২০১০ সালে ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ ছিল বলে সিপিডির হিসাব।

অর্থাৎ ধনীরা ২০১০ সালে যা আয় করতেন, ২০১৬ সালে এসে এরচেয়ে বেশি আয় করছেন, অন্য দিকে আয় কমেছে গরিবদের।

সিপিডির হিসাবে, সবচেয়ে দরিদ্র পাঁচ শতাংশের খানা প্রতি আয় (হাউজহোল্ড ইনকাম) ২০০৫ সালে ছিল ১১০৯ টাকা, যা কমে ২০১৬ সালে ৭৩৩ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ধনী পাঁচ শতাংশের খানা প্রতি আয় ৩৮ হাজার ৭৯৫ থেকে দ্বিগুণের বেশি বেড়ে হয়েছে ৮৮ হাজার ৯৪১ টাকা।

২০১০ সালে দেশের মোট সম্পদের ৫১ দশমিক ৩২ ভাগ ছিল সর্বোচ্চ ধনী পাঁচ শতাংশের কাছে, অন্যদিকে ০.০৪ ভাগ ছিল সবচেয়ে দরিদ্র পাঁচ ভাগের কাছে।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, “পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে প্রবৃদ্ধির সুফল পৌঁছায়নি। গরিবরা আরও গরিব হচ্ছে, ধনীরা আরও ধনীহচ্ছে।"

সামষ্টিক অর্থনীতির অগ্রযাত্রার মধ্যে এই বৈষম্য বাড়ার জন্য ‘প্রবৃদ্ধির গুণগত মানের অভাবকে’ দায়ী করেন সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ গত এক দশক ধরে একটি শোভন প্রবৃদ্ধির হার রক্ষা করতে পেরেছে।

সংবাদ সম্মেলনে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য

“কিন্তু এই শোভন প্রবৃদ্ধির হারের নিচে যে অন্ধকারটি রয়েছে সেটি হল দেশের ভেতরে সে তুলনায় কর্মসংস্থান না হচ্ছে না, দারিদ্র্য বিমোচনের হার শ্লথ হয়েছে এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই বৈষম্য শুধু আয়ে আর ভোগে বৃদ্ধি পায়নি, সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে সম্পদের বৈষম্য।”

এর কারণ হিসেবে ব্যাংকে ঋণের টাকা ফেরত না দেওয়া, বড় বড় প্রকল্পের ভেতর থেকে বিভিন্ন ধরনের ঠিকাদারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থ ভিন্ন দিকে পরিচালনা করাকে চিহ্নিত করেন তিনি।

দেবপ্রিয় বলেন, “আমরা যতখানি না প্রবৃদ্ধির পরিমাণ নিয়ে চিন্তিত থাকতাম, এখন সময় হয়েছে সেই প্রবৃদ্ধির গুণগত মান নিয়ে চিন্তা করার। প্রবৃদ্ধি যে পরিমাণ মানুষকে উপরে তোলার কথা সে পরিমাণ তুলতে পারছে না।”

তিনি জানান, ২০০০ থেকে ২০০৫ সালে দারিদ্র্য হ্রাসের হার ছিল ১ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০১০ থেকে ২০১৬ সালে নেমে হয়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৩ থেকে কমে হয়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ।

অর্থনৈতিক বৈষম্য ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা দেবপ্রিয়র।

তিনি বলেন, "আমাদের বিশ্লেষণ বলে, যদি একটি দেশের ভেতরে ক্রমান্বয়ে আয়ের বৈষম্য বৃদ্ধি পায়, তাহলে তা প্রবৃদ্ধির হারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে অর্থাৎ যত বেশি বৈষম্য দেশে আছে সে দেশে প্রবৃদ্ধির হার উপরের দিকে নেওয়া তত বেশি সমস্যা।”

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ও ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিও ছিলেন।