মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা নিয়ে নতুন বছরে

ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি এবং টাকার মান হারানোর মধ্যে মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা নিয়েই শুরু হল ২০১৮ সাল।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Jan 2018, 06:44 AM
Updated : 1 Jan 2018, 06:44 AM

আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে গতবছর ডলারের দর বাড়তে বাড়তে ৮৩ টাকায় উঠেছে। অর্থাৎ এক ডলারের জন্য এখন গুণতে হচ্ছে ৮৩ টাকা ।

এক বছর আগে এই এক ডলারের জন্য খরচ করতে হত ৭৮ টাকা ৮৫ পয়সা। আর ছয় মাস আগে লাগতো ৮০ টাকা ৬০ পয়সা।

যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান গত এক বছরে এভাবেই কমছে। এতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং রপ্তানি আয়ে ‘ইতিবাচক’ প্রভাব পড়লেও আমদানিতে খরচ পড়ছে বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিদিন ডলার ছেড়েও বাজার ‘স্বাভাবিক’ করতে পারছে না।

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ১০৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার (১.০৬ বিলিয়ন) বাজারে ছেড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে ৩০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে রাষ্ট্রয়াত্ত সোনালী ব্যাংকের কাছে। ২০ কোটি ডলার কিনেছে রূপালী ব্যাংক।

বাকিটা অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এছাড়া রপ্তানিকারকদের সুবিধার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) পরিমাণ দুই বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে আড়াই বিলিয়ন ডলার করা হয়েছে। 

কিন্তু তারপরও ডলারের সঙ্কট কাটছে না। ২০১৭ সালে ব্যাংকগুলোর শেষ লেনদেন দিবস বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮২ টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। আর ব্যাংকগুলো প্রতি ডলারের জন্য তার চেয়েও দেড়-দুই টাকা বেশি নিয়েছে।

হিসাব করে দেখা গেছে, এক বছরে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। ছয় মাসে বেড়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমা দরকার ছিল।

“দীর্ঘদিন ধরে ডলারের বিপরীতে টাকা অতিমূল্যায়িত ছিল। ভারত, ভিয়েতনামসহ বাংলাদেশের প্রতিযোগী বিভিন্ন দেশ অনেক আগেই তাদের মুদ্রার মান কমিয়েছে। আমরা অনেক দেরিতে এই কাজটি করছি।”

তিনি বলেন, দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সরঞ্জামের আমদানি বেড়েছে। আমদানি খরচ মেটাতে ডলারের চাহিদাও বেড়েছে, ফলে ‘স্বাভাবিক কারণেই’ বাড়ছে ডলারের বিনিময় হার।

তবে টাকা যেন খুব বেশি দুর্বল হয়ে না যায়- সে বিষয়েও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।

ডলারের দরের এই ঊর্ধ্বগতি যে পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়,তা ধরা পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে।

আমদানি ঋণপত্র নিষ্পত্তি করতে ব্যাংকগুলো ডলারের যে মূল্য দেখিয়েছে, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তার চেয়ে ২ থেকে আড়াই টাকা বেশি রাখায় ২৬টি ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ব্যাংকগুলো তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ম মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিলেও বছরের শেষে এসে আবারও একই প্রবণতা দেখা গেছে কোনো কোনো ব্যাংকে।   

ব্র্যাক ব্যাংক ক্ষমা চাওয়ার পরও ফের বেশি দামে ডলার বিক্রি করায় দ্বিতীয় দফা নোটিস পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যাংকগুলো মুনাফা বাড়াতে ডিসেম্বরের মধ্যেই সব আমদানি নিষ্পত্তি করতে চায়। মূলত বছর শেষে ভালো মুনাফা করতেই তাদের এ প্রবণতা।

ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বাজারে নজর রেখেছেন এবং চাহিদা অনুযায়ী ডলার ছাড়ছেন। ব্যাংকগুলো যাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনে বেশি দামে বিক্রি না করে সেটাও তদারকি করা হচ্ছে।

২০০৩ সালে দেশে ভাসমান মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা (ফ্লোটিং) চালু হয়। অর্থ্যাৎ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। তার আগ পর্যন্ত টাকা-ডলারের বিনিময় হার বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিক করে দিত।