বিটকয়েন লেনদেন করবেন না: বাংলাদেশ ব্যাংক
আবদুর রহিম হারমাছি, প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 27 Dec 2017 08:38 PM BdST Updated: 27 Dec 2017 09:00 PM BdST
দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ভার্চুয়াল মুদ্রা বিটকয়েন বাংলাদেশে বৈধ নয় জানিয়ে তা দিয়ে লেনদেন না করার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অনলাইনে লেনদেনে বিটকয়েন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ব্যবহার হয়ে আসছে বেশ কয়েক বছর থেকে এবং দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ‘ক্রিপটোকারেন্সি’।
বাংলাদেশেও সম্প্রতি এর লেনদেন শুরু হয়েছে বলে তথ্য পাওয়ার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন অর্থনীতির বিশ্লেষক আহসান এইচ মনসুর।
এই প্রেক্ষাপটে বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক নির্দেশনায় বলা হয়, বিটকয়েনের আইনি কোনো ভিত্তি নেই বলে ঝুঁকি এড়াতে এ দিয়ে লেনদেন কিংবা এর প্রসারে সহায়তা কিংবা প্রচার থেকে বিরত থাকতে সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে।

ভার্চুয়াল মুদ্রা বিটকয়েন জনপ্রিয় হচ্ছে দিনদিনই (প্রতীকী ছবি)- রয়টার্স
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, বাংলাদেশে বিটকয়েনে লেনদেনের সঠিক কোনো তথ্য তাদের কাছে না থাকলেও বিভিন্ন মাধ্যমে তারাও লেনদেনের খবর পেয়েছেন।
“যেহেতু এই লেনদেন অবৈধ। এর আইনি কোনো ভিত্তি নেই। এই লেনদেন হলে মানুষের ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। সে কারণে মানুষ যাতে এই লেনদেন কোনো অবস্থাতেই না করে, সে বিষয়ে সতর্ক করতেই এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে,” বলেন তিনি।
বিটকয়েন লেনদেনে অর্থ পাচারের আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক; যার ভিত্তি আছে বলে মনে করেন আহসান মনসুরও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “নামবিহীন বা ছদ্মনামে প্রতিসঙ্গীর সঙ্গে অনলাইনে ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের দ্বারা মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন হতে পারে।”
এছাড়া, অনলাইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে লেনদেনকারী গ্রাহকরা ভার্চুয়াল মুদ্রার সম্ভাব্য আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকিসহ বিভিন্ন ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন বলে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিটকয়েনের লেনদেন কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত নয় বলে মানুষের আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রা ইথেরিয়াম, রিপল ও লিটকয়েন লেনদেনেও সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
“এসব ভার্চুয়াল মুদ্রা কোনো দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা বৈধ মুদ্রা নয়। ফলে এর বিপরীতে কোনো আর্থিক দাবির স্বীকৃতিও নেই। ভার্চুয়াল এসব মুদ্রার লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদিত না হওয়ায় তা আইন দ্বারা সমর্থিত নয়।”
বিটকয়েন কী
২০০৯ সালে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামের কেউ কিংবা একদল সফটওয়্যার ডেভেলপার নতুন ধরনের ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি’ প্রচলন করে। তারই নাম দেওয়া হয় বিটকয়েন।
ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অনলাইনে দুজন ব্যবহারকারীর মধ্যে এটি সরাসরি (পিয়ার-টু-পিয়ার) আদান-প্রদান হয়। নিজের পরিচয় প্রকাশ না করে এই পদ্ধতিতে লেনদেন করা যায়।
বিটকয়েনের পুরো প্রক্রিয়াটি সারা হয় অনলাইনে একটি উন্মুক্ত সফটওয়্যারের মাধ্যমে, লেনদেনটি যে সার্ভারে সুরক্ষিত থাকে তাকে বলে মাইনার। মাইনারের মাধ্যমে বিটকয়েন তৈরি হয়। একটি লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন বিটকয়েন উৎপন্ন হয়।
আহসান মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিটকয়েন মূলত ইন্টারনেট সিস্টেমে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কে প্রোগামিং করা আছে, যা চাইলে কেনা যায়। তবে এটি কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা কোনো দেশের জারি করা মুদ্রা নয়। ইন্টারনেট সিস্টেমকে ব্যবহার করে কিছু ব্যক্তি এই সিস্টেমকে ডেভেলপ করেছে।”
বিটকয়েন উৎপন্ন হওয়ার পর তা গ্রাহকের ডিজিটাল ওয়ালেটে থাকে। বিটকয়েন দিয়ে কোনো পণ্য কেনা হলে তা বিক্রেতার একাউন্টে পাঠানো হয় এবং বিক্রেতা পরবর্তীতে সেই বিটকয়েন দিয়ে পুনরায় পণ্য কিনতে পারে, অন্যদিকে সমান পরিমাণ বিটকয়েন ক্রেতার লেজার থেকে কমিয়ে দেওয়া হয়।
২০১৫ সাল নাগাদ ১ লাখের বেশি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বিটকয়েন গ্রহণ করছিল। একে ভবিষ্যতের মুদ্রা বলে মনে করা হয়। ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজের গবেষকরা বলছেন, ২০১৭ সাল শেষে ৬০ লাখের মতো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিটকয়েন ওয়ালেট বা ডিজিটাল ওয়ালেট থাকবে।
যেহেতু বিটকয়েনে লেনদেনে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন পড়ে না এবং এর লেনদেনের গতিবিধি অনুসরণ করা যায় না, তা মাদক ও অর্থ পাচারে এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। আবার লেনদেনে ব্যয় কম হওয়াটাও এর জনপ্রিয়তার বড় কারণ।

সুইজারল্যান্ডের জুরিখে বিটকয়েনের এটিএম- ছবি: রয়টার্স
আহসান মনসুর বলেন, “জুয়ারিদের কাছে এটা জনপ্রিয়। একসময় এর দাম ছিল ১০০ ডলার। এক বছরের মধ্যে তা বেড়ে হয় ১ হাজার ডলার। গত সপ্তাহে এর দাম ১৯ হাজার ডলারে উঠে গিয়েছিল। আজ (২৭ ডিসেম্বর) ১২ হাজার ডলারে নেমে এসেছে। এভাবেই উঠা-নামা করে বিটকয়েন।
“সেই লোভে পড়ে অনেকেই এই মুদ্রায় বিনিয়োগ করছে। কিন্তু হঠাৎ করে এর পেছনের লোকেরা বাজার থেকে সরে গেলে বিপদে পড়বেন অনেকেই।”
তিনি বলেন, “বিটকয়েন লেনদেন জুয়া খেলার চেয়েও মারাত্মক। জুয়া খেলতে তো ক্যাশ টাকা লাগে। এখানে সেটাও লাগে না। এটা বাড়তে থাকলে বিশ্বব্যাপী আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে।”
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বিটকয়েন লেনদেন হলেও এই ‘জুয়াখেলা’ বন্ধ করতে সব কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরই এগিয়ে আসা উচিৎ বলে মনে করেন আহসান মনসুর, তবে তা হওয়া নিয়েও সংশয়ে রয়েছে তার।
“আমি মনে করি, সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরই এই জুয়া খেলা বন্ধ করতে এগিয়ে আসা উচিৎ। তবে এখানে সমস্যা আছে। আমেরিকার মতো দেশ জুয়া খেলাকে (ক্যাসিনো) আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। প্রতিদিন কোটি কোটি ডলার লেনদেন হয় ক্যাসিনো হাউজগুলোতে। তারা এটি (বিটকয়েন) বন্ধ করতে কতোটা আগ্রহী হবে সেটাই বড় বিষয়।”
-
ব্যাংককর্মী কোভিডে আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ আর নেই
-
‘হিট শকে’ এক লাখ টন চাল কম উৎপাদনের শঙ্কা
-
ইএফটি চালু, চেকও ক্লিয়ার হচ্ছে
-
ঝুঁকিতে থাকা শ্রমিকদের বাঁচাতে সামাজিক সংলাপের তাগিদ
-
ভ্যাট ফাঁকি: নারায়ণগঞ্জ ক্লাবকে নোটিস
-
কাগজের কর প্রত্যাহার চান সম্পাদকরা
-
ব্যাংকে গ্রাহক কম, লেনদেনও হাতেগোনা
-
খাতা খোলার হাল ফেরেনি
সর্বাধিক পঠিত
- মামুনুলের রিসোর্টকাণ্ড: সোনারগাঁওয়ের ওসি রফিকুল চাকরিই হারালেন
- মামুনুলের ৩ বিয়ে, কাবিন একটির: পুলিশ
- লকডাউন বাড়ছে এক সপ্তাহ: প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ
- সুপার লিগে রিয়াল-বার্সাসহ ১২ ক্লাব, ফুটবল বিশ্বে ঝড়
- কোভিড-১৯: দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে যে কারণে ব্যর্থ ভারত
- গ্রেপ্তার বন্ধের দাবি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে হেফাজত নেতারা
- কোভিডে আক্রান্ত ব্যাংককর্মীর ক্ষতিপূরণ নেই, মৃত্যুতে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা
- চিকিৎসক-পুলিশ পাল্টাপাল্টি বিবৃতি
- মামলার পর বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইলেন নূর
- পাল্টে গেল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফরম্যাট