পিপিপি প্রকল্পে ৫ বাধা

বড় প্রত্যাশা নিয়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) অর্ধশত প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও নয় বছরেও তাতে গতি আসেনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2017, 02:04 PM
Updated : 20 Dec 2017, 02:08 PM

এই গতিহীনতার কারণ খুঁজতে গিয়ে পাঁচটি ক্ষেত্রে অন্তরায় পেয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষকরা।

বুধবার ঢাকার মিরপুরে বিআইবিএম মিলনায়তনে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত ‘ফিন্যান্সিয়াল অ্যান্ড নন-ফিন্যান্সিয়াল ইস্যু ইন ইমপ্লেমেন্টিং পিপিপি ইন বাংলাদেশ : অ্যান এক্সামিনেশন অব পিপিপি প্রজেক্টস ইন পাইপলাইন’  শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই অন্তরায়গুলো চিহ্নিত করা হয়।

এতে বলা হয়, সঠিক প্রকল্প বাছাই না করা, অসম্পূর্ণ সম্ভাব্যতা যাচাই, অস্বাভাবিক ব্যয়, দুর্নীতি ও সরকারের নজরদারির অভাব এবং সক্ষমতা ঘাটতির কারণে পিপিপির প্রকল্প বাস্তবায়ন ধীর গতিতে চলছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর শোরগোল তুলে পিপিপির মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের তোড়জোর শুরু হলেও এর মাধ্যমে গৃহীত একটি প্রকল্পও এখনও শেষ করা যায়নি।

২০০৯ সালের পর প্রথম বাজেটেই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পিপিপির মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়নে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিলেন। এরপর প্রতিবছর ৩ হাজার কোটি টাকা করে বরাদ্দ থাকলেও ব্যয় না হওয়ায় তা নিয়মিতই ফেরত যাচ্ছে।

পিপিপির আওতায় ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল ভিত্তি স্থাপনের পর ছয় বছরে কাজ এগিয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ এগিয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ

 

কয়েক বছর ধরেই পিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পের একই তালিকা ঝুলছে, এই সংখ্যা ৪৭ দেখানো হচ্ছে। এগুলোর কোনোটির দরপত্র আহ্বান হয়েছে, কোনোটির কাজ শুরুর পর্যায়ে।

বিআইবিএমের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান পিপিপির মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের সুবিধা তুলে ধরে বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে যে পরিমাণ অবকাঠামো সম্পর্কিত প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রয়োজন, তা সরকারের একার পক্ষে সম্ভবপর নয়।

এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং অর্থায়নে অন্তরায়গুলো মেনে নিয়ে তিনি বলেন, এগুলো মোকাবেলা করা সম্ভব না হলে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ চৌধুরী বলেন, পিপিপি প্রকল্পের মেয়াদ বার বার বাড়ার কারণে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে।

পিপিপি সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী।

তিনি জানান, প্রতিবেদনটি তৈরিতে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয় ও দাতা সংস্থা মিলিয়ে মোট ৬৫টি প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে ‘অ্যান ইভালুয়েশন অব কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার ইন ব্যাংকস অব বাংলাদেশ’ শিরোনামের আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহাবুবুর রহমান আলম।

এতে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো নিম্নমানের সফটওয়্যার ব্যবহার করায় প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ধরনের জাল-জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে।

সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ চৌধুরী বলেন, “ব্যাংক খাতে সবচেয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে আইটি খাত। এ খাতে পর্যাপ্ত জনবল দেওয়া হয় না। ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগও কম।”

মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমীন বলেন, ব্যাংক খাতে এখন আইটি জনবল দরকার।

বাংলাদেশ ইনফ্রাচট্রাকচার ফিন্যান্স ফান্ড লিমিটেডের (বিআইএফএফএল) নির্বাহী পরিচালক এস এম ফরমানুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াছিন আলীও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড.তৌফিক আহমদ চৌধুরী।