উৎপাদন-বিপণনে কৃষকের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের পরামর্শ

সবার সমানাধিকারের দেশ গড়তে উৎপাদন ও বিপণনের সব পর্যায়ে কৃষক-শ্রমিকের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2017, 03:25 PM
Updated : 18 Dec 2017, 03:25 PM

সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলোচনা সভায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের এই চেয়ারপারসন বলেন, “কৃষকের উৎপাদিত আলু যখন হিমাগারে যায়, তখন সেটা মাত্র দুই টাকায় যায়। সেটা যখন ঢাকার খুচরা বাজারে আসে তার মূল্য দাঁড়ায় ২০ টাকা।

“এটা অন্যায্য ও অতিমাত্রায় অকার্যকর পদ্ধতি। এক্ষেত্রে যে সংযোজন হল সেখানে তাদের অংশ নিশ্চিত করতে হবে।”

এক্ষেত্রে চাল কল, হিমাগার পদ্ধতি, বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক ও এগ্রো প্রসেসিং নেটওয়ার্কে কৃষকের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের পথ খোঁজার পরামর্শ দেন তিনি।

উৎপাদনের মূল্য সংযোজন ব্যবস্থায় শ্রমিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য রেহমান সোবহান বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মেহনতি মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সেটা কেবল রাজনৈতিক গণতন্ত্র নয়, অর্থনীতি ও সামাজিক গণতন্ত্রেও তাদের সম্পৃক্ত করা জরুরি।

“শ্রমিক-কৃষকের বিশেষ মালিকানা, মূল্য সংযোজনে অংশীদারিত্ব ও উৎপাদন ব্যবস্থায় তাদের মালিকানা প্রতিষ্ঠার মডেল নিয়ে এগোলে যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সেটা কিছুটা পূরণ হতে পারে।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন রাজনৈতিক দলের মধ্যে যারা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাধা হয়ে আছে তাদেরকে চিহ্নিত করার আহ্বান জানান ।

“আমাদের স্বার্থটা এখানে বুঝতে হবে। কারা পরিবর্তন চায়, কাদের স্বার্থে পরিবর্তন দরকার। কিন্তু কারা এখানে বাধা তাদেরকে আপনারা চিহ্নিত করুন।

“বাংলাদেশে যে পরিবর্তনের স্বপ্ন, আমাদের স্বপ্ন- বৈষম্য থেকে, সন্ত্রাস থেকে, সাম্প্রদায়িকতা থেকে মুক্ত হওয়ার স্বপ্ন, এটা সব দলই চায়, দ্বিমত কেউ করে না, নিরপেক্ষভাবে আইনের প্রয়োগ সবাই চায়। তাহলে বাধাটা কোথায়?”

জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা আচরণে মনক্ষুন্ন হওয়ার কথা জানান তিনি।

তিনি বলেন, “লাখ লাখ শহীদ প্রাণ দিয়েছেন। যারা স্মৃতিসৌধে গিয়ে লাফালাফি করে, নেতানেত্রীদের নামে স্লোগান দেয়, তাদের দৃষ্টি শহীদদের দিকে নয়। এর মাধ্যমে যারা স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়েছিল অন্যায় বৈষম্য থেকে মুক্ত করার জন্য, তাদেরকে অসম্মান করা হয়।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “স্বাধীনতার স্বপ্ন থেকে বাংলাদেশের সংবিধানে সব ধরনের বৈষম্য ও বঞ্চনা থাকবে না এমন বিধান রাখা হয়েছিল। কতগুলো মৌলিক অধিকার থাকবে, সেগুলো মধ্যে কিছু অধিকার শর্ত সাপেক্ষ ও কিছু স্বাধীনভাবে।

“সম্পদের তিনটি রূপের কথা হয়েছিল। ব্যক্তিগত, রাষ্ট্রীয় ও সমবায়। কিছু সম্পদ রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়েছিল। সমবায়ের একটা ধারা বলবৎ ছিল, সেটাকে কার্যকর করা হয়েছিল। পুরো প্রক্রিয়াটা একটা সময় পর পাশার মতো উল্টে যায়।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ রাষ্ট্র যেখান থেকে শুরু হয়েছিল, সেখান থেকে এখনো পিছিয়ে আছে। তা না হলে আমরা সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাস দেখতাম না। তবুও আমরা আশা করতে চাই, আমরা এই অবস্থা থেকে উত্তরণ করব। উত্তরণের উপায় বের করা দরকার।”

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে আলোচনায় তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সোহেলা নাজনীন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক কাজী আলী তৌফিক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের শিক্ষক মির্জা হাসান।

রুশ বিপ্লবের শতবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ওই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা নাগরিক উদ্যোগ।

সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন ‘নয়া-উদারতাবাদ বলয়ের বাইরে: বাংলাদেশে পুঁজিবাদ উত্তর সমাজ ব্যবস্থার রূপকল্প’ শীর্ষক আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য দেন।