নির্মাণ শেষ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ মার্চে: বিটিআরসি

বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেছেন, আগামী মার্চে ফ্লোরিডার লঞ্চ প্যাড থেকে এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা যাবে বলে তারা আশা করছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2017, 09:04 AM
Updated : 29 Nov 2017, 02:01 PM

বুধবার বিটিআরসি কার্যালয়ে টেলিকম খাতের সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরএনবির নবগঠিত কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়ে এ কথা জানান বিটিআরসি প্রধান।

তিনি বলেন, “ফ্রান্স সফরে গিয়ে আমরা সেটি দেখে এসেছি। নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে।এখন উৎক্ষেপণের অপেক্ষা। মার্চের কোনো এক সময় উৎক্ষেপণ করা হবে বলে আমরা আশা করছি।”

যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কোম্পানি ‘স্পেসএক্স’ এর ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে গত ১৬ ডিসেম্বরে ফ্লোরিডার কেইপ কেনাভেরালের লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি চলছিল।

কিন্তু হারিকেন আরমায় ফ্লোরিডায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় ওই লঞ্চ প্যাড থেকে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বন্ধ থাকে। ফলে বিভিন্ন দেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ পিছিয়ে যায় এবং বাংলাদেশ সূচির জটে পড়ে।

উৎক্ষেপণে বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিটিআরসি প্রধান বলেন, “আমেরিকান একটি কোম্পানি স্যাটেলাইট লঞ্চ করবে। তারা একটি পুরনো রকেট ব্যবহারের সুপারিশ করেছিল, অধিকাংশই তাই করে। আমরা বলেছি পুরনো রকেট ব্যবহার করব না। এটা একটা কারণ।

“আর যেহেতু স্পেস এক্স অত্যন্ত নামকরা কোম্পানি, ওদের ওখানে লম্বা লাইন হয়ে আছে। ওই লাইনের ভিতরে আমরা পড়েছি।”

পরে সচিবালয়ে ফোর-জি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডাক ও টেলিযোগাযাগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, “আরমা ঝড়ের কারণে শিডিউলের একটু সমস্যা হয়েছে। আমাদের আগের যে স্যাটেলাইটগুলো উৎক্ষেপণের কথা ছিল, সেগুলোরও ডিলে হয়েছে।”

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নির্মাণ কাজ চলে ফ্রান্সের থালেস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে। নির্মাণ, পরীক্ষা, পর্যালোচনা ও হস্তান্তর শেষে বিশেষ কার্গো বিমানে করে সেটি কেইপ কেনাভেরালের লঞ্চ সাইটে পাঠানোর কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “প্রকৃতি একটা মেজর ফ্যাক্টর। গতবার আমি যখন যুক্তরাষ্ট্রে গেছি তখন স্পেস এক্স ও থালেসের  সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা আমাদের বলেছে, সব শেষে সাত দিনের একটা উইন্ডো দেবে। যেহেতু ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অন্যগুলো পিছিয়ে গেছে, তারা ১৫ দিন পর পর উৎক্ষেপণের চেষ্টা করছে।”

মার্চে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ নিয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যানের বক্তব্যের বিষয়ে তারানা হালিম বলেন, “আমি মনে করি এ বিষয়টি আমাদের আরেকটু বিশ্লেষণ করে… আমি চাই একেবারে সঠিক মাসটি যেন আপনাদের বলতে পারি।… ফেব্রুয়ারি টু মার্চ তারা একটা উইন্ডো দিয়েছে আমাদের। আমরা আরও নির্দিষ্ট করে তারিখ দিতে চাই। দোয়া করবেন, যেন আর যেন ঝড়-ঝঞ্ঝা না হয়।”

২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এই ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকায় ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কিনতে থালেসের সঙ্গে চুক্তি করে বিটিআরসি।

‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণে অর্থায়নের জন্য হংক সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) সঙ্গে গতবছর প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি করা হয়।

সরকার আশা করছে, এ উপগ্রহ উৎক্ষেপণের পর বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে বাংলাদেশের।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপনের জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি স্থানে কাজ চলছে।