দারিদ্র্য দূরের নীতিতে আরও ১৫ বছর: মুহিত

দারিদ্র্য কমানো নয়, বরং দারিদ্র্য দূরের অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে বাংলাদেশ এগোচ্ছে মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আগামীতে যে সরকারই আসুক না কেন তাদের এই নীতি অবলম্বন করতে হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2017, 04:43 PM
Updated : 28 Nov 2017, 04:43 PM

মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতি হচ্ছে দারিদ্র্য দূরীকরণ, এটা কমানো নয়। কারণ আপনি দারিদ্র্য যত দূর করবেন, আপনার অভ্যন্তরীণ মার্কেট তত বড় হতে থাকবে। যেটা বাংলাদেশে ঘটেছে।

“আগামী ১০ থেকে ১৫ বছর দারিদ্র্য দূরীকরণ অর্থনৈতিক নীতিতে থাকতেই হবে। আমাদের থাকবে। যারাই আসুক সরকারে তাদের এটা থাকতে হবে।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা ১০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য সীমার উপরে এনেছি। তিন কোটি মানুষ এখনও গরিব। প্রত্যেক দেশে কিছু লোক গরিব থাকবেই। প্রতিবন্ধী, বিধবা প্রভৃতি।

“এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো করেছে মালয়েশিয়া, তাদের মাত্র ৭ শতাংশ। আগে আমরা চিন্তা করতাম ১১-১৪ শতাংশে নামালেই হবে। তাদের এটা দেখে আমরা ভাবছি, আমাদেরও সেটা করতে হবে।”

সময়ের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়েছে উল্লেখ করে মুহিত বলেন, “আমার প্রথম চাকরি জীবনে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা ছিল প্রায় ১৪ শতাংশ, আজকে সেটা ৭০ শতাংশ। বাজার মূল্যও বাড়ছে। এটা ইনক্রিজ করতেই থাকবে।”

বাংলাদেশের মানুষের যে কোনো নতুন বিষয় ধারণ করার সক্ষমতার কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা খুবই সৌভাগ্যবান। আমাদের দেশের লোক, তাদের শিক্ষা দীক্ষা কম, তারা চাষীই হোক বা শ্রমিকই হোক, তারা অতি সহজে আত্মস্থ করে। যেমন ধরেন সারের ব্যবহার, এটা তাদের একবার জানালে হয়। এটা তারা সহজে আত্মস্থ করে নেয়।

“তারা সহজে আত্মস্থ করতে পারায় আমরা সে রকমভাবে পরিকল্পনা করি, সেভাবে সফল হয়।”

আর সে কারণে স্বাধীনতার পর মাত্র ১১ মিলিয়ন মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন থেকে এখন সেটা ৩৮ মিলিয়ন মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

“কৃষক-শ্রমিকদের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন কৃষি ও প্রাণি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকরাও সেক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।”

রাষ্ট্রদূত সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।

বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র বাইরে তুলে ধরা এবং বিদেশের বিভিন্ন দেশের বিশেষ কৃতিত্বের বিষয় সরকারকে জানাতে রাষ্ট্রদূতদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “দেখা যায়, দেশটা তেমন উন্নত না। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্র আছে, তার কিছু বিশেষত্ব আছে, বিশেষ রকমের তার কৃতিত্ব আছে। সেটা যাতে আপনারা আমাদের জানাতে পারেন, তথ্যটা দিতে পারেন, সেটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হয়।”

অনুষ্ঠানে দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থাপনায় রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর পাশাপাশি মিয়ানমারের উপর চাপ অব্যাহত রাখতে তৎপরতা চালিয়ে যেতে রাষ্ট্রদূতদের প্রতি আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।

তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কেবলমাত্র তাদের প্রত্যাবাসনের মধ্যে নিহিত রয়েছে। এ সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের জোরালো প্রচেষ্টার মাধ্যমে অনেকটাই রোহিঙ্গাদের পক্ষে আনা গেছে।

“আমাদের এই তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান পেতে দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক সব প্ল্যাটফর্মে মিয়ানমারের উপর চাপ বাড়াতে হবে। আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছাড়া এটি সম্ভব হবে না।”

একইসঙ্গে বিভিন্ন দেশের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে তৎপরতা যাতে অব্যাহত থাকে সেদিকে নজর দিতে রাষ্ট্রদূতদের প্রতি আহ্বান মাহমুদ আলী।

তিনি বলেন, “নিজ নিজ স্বাগতিক দেশের সরকারি, বেসরকারি, সুশীল সমাজ ও সাধারণ নাগরিকের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করুন, যাতে মিয়ানমারের উপর ঘনীভূত চাপ অব্যাহত থাকে। এবং আমরা এই সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।”

রোহিঙ্গা ইস্যুটি বহুমাত্রিক ও বহু স্তর বিশিষ্ট উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা কূটনৈতিকভাবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে এর একটি স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজছি। কোনো ধরনের সামরিক সমাধান নয়, বরং মিয়ানমারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রেখে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের বসতবাড়িতে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে ফেরানোর লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ।”

নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশ হলে বাংলাদেশের কূটনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ যুক্ত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে আমরা এখন যেসব সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি, সেগুলো পাব না। সুতরাং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা কীভাবে পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমাদের বিভিন্ন অগ্রাধিকার ইস্যু যেমন জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ইস্যু, বৈশ্বিক নিরাপত্তা, সেই সঙ্গে বিভিন্ন বৈশ্বিক ইস্যু যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের জাতীয় লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাব, সেটা বিবেচনা করতে হবে।

“গতানুগতিক পদ্ধতির পরিবর্তে নতুন ও সময়োপযোগী পন্থা অবলম্বন করতে হবে।”

বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি দূর ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে মনোযোগী হতে রাষ্ট্রদূতদের প্রতি আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

তিনি বলেন, “আমাদের পণ্যের বহুমুখীকরণ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে ঐতিহাসিক ভূমিকা আপনারা রাখতে পারেন। তাহলে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ বিলিয়ন ডলারের যে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি সেটা সফল হবে।”

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বক্তব্য দেন।