অবৈধ আর্থিক লেনদেনকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিয়ের ‘বড় বাধা’ হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেছেন, মোবাইল ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অবৈধ লেনদেন এখন গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) দুই দিনের বার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সোমবার একটি সেশনের মূল প্রবন্ধে এ কথা বলেন ইব্রাহিম খালেদ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরীও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ইব্রাহিম খালেদ বলেন, মুদ্রা পাচার ও অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ ওঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে তিন হাজারের বেশি মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে।
“মোবাইল ও এজেন্ট ব্যাংকিং অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিংয়ে গুরুত্বর্প্ণূ ভূমিকা রাখলেও এখন তা গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
ইব্রাহিম খালেদ বলেন, গতবছর মোবাইল কোম্পানিগুলো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করে। কিন্তু বিটিআরসি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না থাকায় ওই আবেদনে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
“বাংলাদেশ ব্যাংক ফোন কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা নয়। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোবাইল কোম্পানিগুলোর আবেদন প্রত্যাখ্যান ছাড়া কোনও বিকল্প ছিল না।
অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করা বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম দায়িত্ব।”
এর আগে গত ২১ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা লেনদেনে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, অর্থ লেনদেনের এই পদ্ধতিতে ‘লুটপাট ও ডাকাতি’ হচ্ছে।
“বগুড়ায় আমার এক শিক্ষককে কিছু টাকা পাঠাইতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গুণে গুণে ২ শতাংশ কেটে রেখেছে। তারপর টাকা তুলতে গেলে শিক্ষকের কাছ থেকেও টাকা কেটে নিয়েছে। এই রকম লুটপাট ও ডাকাতি করছে। যেহেতু কোনো নিয়ামক পরিমণ্ডল নেই, তাই কাউকে ধরা যাচ্ছে না।”
ফরাসউদ্দিন বলেন, “বাজার অর্থনীতিতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতবাজ-লুটেরারা অনেক বেশি সক্রিয় হয়েছে।কারণ হল ওই যে পরিমণ্ডল, যদি রেগুলেটরি ফ্রেইম ওয়ার্ক ছাড়া টেকনলজিক্যাল অ্যাডভান্সমেন্টে চলে যান... এই যে মোবাইল ফান্ড ট্রান্সফার, বলে মোবাইল ব্যাংকিং, আমি তীব্র ভাষায় নিন্দা করি, ধিক্কার জানাই।”
বিআইবিএম এর অনুষ্ঠানে ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী বলেন, আর্থিক অবকাঠামোতে দৃশ্যমান গতি আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। আর্থিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়নের দিকে দেশকে এগিয়ে নেওয়াই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য।
“ইতোমধ্যে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে মোবাইল ব্যাংকিং যুক্ত হয়েছে। এর ফলে প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীও ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসছে। মোবাইল ব্যাংকিংকে বাংলদেশ ব্যাংক আরও গ্রাহকবান্ধব করতে চায়। এতে অর্ন্তভুক্তিমূলক র্অথনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে। এজন্য স্কুল ব্যাংকিং ছাড়াও আর্থিক খাতের বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।”
বাংলাদেশ ব্যাংককে শতভাগ স্বয়ংক্রিয় করাই এখন প্রধান লক্ষ্য বলে জানান এই ডেপুটি গভর্নর।