লক্ষ্য পূরণে ‘রূপান্তরমুখী জ্বালানিতে’ জোর আঙ্কটাডের

বিদ্যুৎ খাতে উন্নয়নের টেকসই লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে উল্লেখ করে শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে ‘রূপান্তরমুখী জ্বালানির’ প্রাপ্যতা নিশ্চিতে গুরুত্ব দিতে বলেছে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাড।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2017, 02:21 PM
Updated : 22 Nov 2017, 02:21 PM

স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ওপর আঙ্কটাডের এ বছরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসডিজির লক্ষ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে সবার কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে হলে প্রতি বছর নতুন সংযোগ দেওয়ার পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হারে বাড়াতে হবে।

স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ওপর আঙ্কটাডের চলতি বছরের প্রতিবেদন প্রকাশ করে এর বিভিন্ন দিক বুধবার গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে ছিলেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

স্বল্পোন্নত দেশগুলোর উন্নয়নে বিদ্যুৎ স্বল্পতাকে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মাত্র ৬২ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। আর এসব দেশের গ্রামীণ জনসংখ্যার ৮২ ভাগই বিদ্যুতের আওতায় আসেনি। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব দেশে ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালে যত মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে, ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জনের সময়সীমার মধ্যে তার সাড়ে তিনগুণ বেশি মানুষের কা েবিদ্যুৎ পৌঁছাতে হবে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, উন্নত বিশ্বে শিল্পায়ন হওয়ায় তারা বিদ্যুৎ দিয়ে শিল্প চালায়। কিন্তু স্বল্পোন্নত দেশগুলোর আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসে কৃষি খাত থেকে। তাই কৃষি খাতেই বিদ্যুতের সবচেয়ে বেশি চাহিদা। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নয়ন হলে কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা নিয়ে তাদের আয় বাড়াতে পারবে।

“কিন্তু স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে প্রতিমাসে কমপক্ষে ১০ বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে বা লোডশেডিং হচ্ছে। এর ফলে তারা উৎপাদন হারাচ্ছে। অর্থাৎ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকলে উৎপাদন বাড়বে। এর ফলে জাতীয় প্রবৃদ্ধি বাড়বে।”

এভাবেই স্বল্পোন্নত দেশগুলোর উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, এই প্রতিবেদনে জ্বালানি এবং উন্নয়নের মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে।

“কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন জ্বালানি সরবরাহ করতে হবে। যে জ্বালানি স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর সেই জ্বালানি দিয়ে উৎপাদন হবে না। গুণগত মান বাড়াতে হবে। না হলে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। জ্বালানি খরচের ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াতে পারলে খরচ কমে আসবে।

“আর্থিকভাবে সাশ্রয় করতে পারলে টেকসই উন্নয়ন হবে। একইসঙ্গে নির্ভরযোগ্য, নিরবচ্ছিন্ন ও পর্যাপ্ত হতে হবে। জ্বালানি ও রূপান্তর এক সাথে জড়িত।

গ্রামের জন্য রূপান্তরমুখী জ্বালানি প্রয়োজন হবে, তা না হলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর কথা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে উল্লেখ করে ফাহমিদা বলেন, “এটা আমাদের জন্য একটি সুযোগ।তবে এক্ষেত্রে যদি আমরা দক্ষতা দিয়ে উৎপাদন বাড়াতে না পারি তাহলে এটার দাম অনেক বেশি হয়ে যাবে।

“যেমন ভারতের সাথে আমাদের সোলার পাওয়ারের দাম তুলনা করলে দেখা যাবে আমাদের দেশে দাম অনেক বেশি।দক্ষতা বাড়িয়ে কম দামে সোলার পাওয়ার সরবরাহ করতে পারলে আমাদের বিদ্যুতের দাম কমে যাবে। একইসঙ্গে অনেকাংশে জ্বালানি চাহিদাও মেটাতে পারব।”

দেশের বিদ্যুৎ খাতের টেকসই উন্নয়নে একটি কৌশল গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করার পাশাপাশি সব ধরনের তথ্যের ভিত্তিতে বাস্তবতার আলোকে একটি নীতিমালা প্রণয়নের কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সেখানে মানব সম্পদে উন্নয়ন বা দক্ষতা বাড়ানোর গবেষণা চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানি কীভাবে বাড়ানো যায় তাও দেখতে হবে।

ফাহমিদা বলেন, “এমন একটা শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা পরিচালন সংস্থা তৈরি করতে হবে, যা বাস্তবতার আলোকে নীতি গ্রহণ করবে এবং বাস্তবায়ন করবে।”

আঙ্কটাডের আরেকটি সুপারিশ হচ্ছে, জ্বালানি ও উন্নয়ন নীতিমালার মধ্যে একটি সম্পর্ক তৈরি করা। এক্ষেত্রে কৃষি বা শিল্প, আমদানি বা রপ্তানি উন্নয়নের জন্য কি কি করতে হবে তার মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।