ট্যানারি স্থানান্তরের প্রকল্পের মেয়াদ আবার বেড়েছে

ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলো সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে স্থানান্তরের প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বেড়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2017, 11:23 AM
Updated : 7 Nov 2017, 11:26 AM

তৃতীয়বারের মতো সংশোধনী এনে আগামী ২০১৯ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০০৩ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পটি ১৫ বছরেও শেষ করতে না পেরে এখন আরও সময় নেওয়া হল। তবে এবার প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়নি। দ্বিতীয় সংশোধনীর মতো এর ব্যয় প্রায় এক হাজার ৭৯ কোটি টাকাই রাখা হয়েছে।

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্পের সংশোধনীসহ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের মোট আট প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, “অনেক ব্যবসায়ী এখানে (হাজারীবাগে) ৫০-৬০ বছর ব্যবসা পরিচালনা করেছেন।

“তাছাড়া চামড়া শিল্প সরানো একটি জটিল প্রক্রিয়া, তাই সহজে এক জায়গা থেকে অন্য একটি জায়গায় স্থানান্তর এত সহজ নয়। তাই হাজারীবাগের ব্যবসায়ীদের সাভারের নতুন শিল্পনগরীতে যাওয়ায় দেরি হচ্ছে।”

২০১৯ সালের মধ্যে ‘অবশ্যই এ প্রকল্প’ শেষ করা হবে, বলেন মন্ত্রী।

হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরাতে আদালতের নির্দেশনার পর সরকার তৎপর হয়; যদিও ট্যানারি মালিকরা সাভারে সরে যেতে নারাজ। তারা চামড়া শিল্প নগরীর অবকাঠামোর দুর্বলতা ও শ্রমিক না পাওয়ার কথা বলে আসছে।

মুস্তফা কামাল বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ হাজারীবাগে পরিবেশ দূষণের কারণে সাভারে আধুনিক বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থাসহ চামড়া শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

২০০৩ সালে প্রকল্পটি নেওয়ার সময় ২০০৫ সালে তা শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল, ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এরপর প্রকল্প ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছিল।

কিন্তু প্রকল্পের অনুকূলে সাহায্য না পাওয়ায় ২০০৩ সালে অর্থায়নের ধরন পরিবর্তন করে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে মোট ৫৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় ২০১০ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন করা হয়।

কিন্তু ২০১০ সালেও প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাজ পিইটিপি, ডাম্পিং ইয়ার্ড এবং পানি উত্তোলন, পরিশোধন ও সরবরাহ ব্যবস্থার কাজ শেষ করা সম্ভব না হওয়ায় প্রকল্পটির মেয়াদ আর ২ বছর বাড়ানো হয়। একনেক ২০১৩ সালে তা অনুমোদন করে। দ্বিতীয় সংশোধনে ব্যয় বেড়ে হয় ১ হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

তখন ২০১৬ এর মধ্যে প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হলেও পরে তা ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এখন তা ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ল।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বৈঠকে মোট আটটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৯৭৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪ হাজার ৬৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, দাতাদের কাছ থেকে বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে ৮৫৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের জোগান থাকবে ৫১ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে

>> ‘ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন (২য় পর্যায়)’ প্রকল্প। এর ব্যয় প্রায় ১ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা।

>> ‘টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা নামক এলাকাকে যমুনা নদীর ভাঙন হতে রক্ষার্থে নদী তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্প। এর ব্যয় ২৮১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

>> ‘ওয়েস্ট জোন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও পরিবর্ধন’ প্রকল্প। এর ব্যয় ১ হাজার ২৪৯ কোটি ৫ লাখ টাকা।

>> ‘দেশের ৮টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস স্থাপন’ প্রকল্প। এর ব্যয় ৫৮২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

>> ‘সৈয়দপুর-নীলফামারী মহাসড়ক (আর-৫৭০) প্রশস্তকরণ ও মজবুতকরণ’ প্রকল্প। এর ব্যয় প্রায় ২২৬ কোটি টাকা।

>> ‘নওগাঁ-আত্রাই-নাটের মহাসড়কে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ’ প্রকল্প। এর ব্যয় ২০১ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

>> ‘জয়পুরহাট-আক্কেলপুর-বদলগাছী জেড-৫৪৫২) এবং ক্ষেতলাল-গোপিনাথপুর-আক্কেলপুর (জেড- ৫৫০৮) জেলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতকরণ’ প্রকল্প। এর ব্যয় ৭৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা।