আংশিক সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশে পেইপ্যাল সেবা জুম

বহু আলোচনার পর আংশিক সুবিধা নিয়েই বাংলাদেশে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম পেইপ্যালের জুম সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হচ্ছে।

সুমন মাহবুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2017, 03:18 PM
Updated : 19 Oct 2017, 02:30 AM

এই সেবা হবে ‘ইনবাউন্ড’। অর্থাৎ, বিদেশ থেকে কেউ টাকা পাঠালে বাংলাদেশে নয়টি ব্যাংকের যে কোনো শাখা থেকে মোটামুটি এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে তা তোলা যাবে।

কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কেউ অন্য কোনো দেশে টাকা পাঠাতে পারবেন না। প্রাতিষ্ঠানিক কাজে দেশের বাইরে বিল পরিশোধ, ইন্টারনেটে কেনাকাটা বা হোটেল বুকিংয়ের সুবিধাও আপাতত পাওয়া যাবে না।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ‍জুনাইদ আহমেদ পলক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা দেশে বসে বিদেশে কাজ করেন, ফ্রিল্যান্সার বা আউটসোর্সিংয়ে জড়িত, আপাতত তারা পেইপ্যালের জুম সেবা ব্যবহার করে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা দেশের যে কোনো প্রান্তে বসে তুলতে পারবেন। এটাই ছিল আমাদের প্রথম চাওয়া।”

প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশে পেইপ্যালের জুম সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।

পেইপ্যাল অ্যাকাউন্ট নির্ভর একটি অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থা। ২০১৫ সালে তারা জুম কিনে নেয়। ওই বছর শেষ দিকেই কয়েকটি ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশে জুমের সেবা চালু হয়।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপসহ ২০৩টি দেশে এই সেবা চালু রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১৪ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারী পেইপ্যালের মাধ্যমে ২৬টি দেশের মুদ্রায় অর্থ লেনদেন করতে পারেন।

দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় থাকা তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্সাররা বাংলাদেশে পেইপ্যালের জুম সেবা চালুর খবরকে স্বাগত জানালেও কিছু বিষয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে তাদের মধ্যে।

>> আপাতত বাংলাদেশে সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে পেইপ্যালের জুম সেবায় যুক্ত হওয়া যাবে।

>> এই সেবা পেতে ওই নয় ব্যাংকের যে কোনো একটিতে অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।

>> বিদেশ থেকে যিনি টাকা পাঠাবেন, তার সেই দেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও জুম অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। তার পাঠানো টাকা ৪০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশে প্রাপকের অ্যাকাউন্টে পৌঁছাবে।  

>> বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের একজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানান, এই সেবার মাধ্যমে যে দেশের মুদ্রাতেই অর্থ আসুক, প্রাপককে তা এ দেশের মুদ্রায় তুলতে হবে। অর্থাৎ, বিদেশ থেকে ডলার পাঠালে এ দেশে তা টাকা হিসেবেই তুলতে হবে।

>> আপাতত আরএফসিডি (রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট) অ্যাকাউন্ট পেইপ্যালের এই সেবার সঙ্গে যুক্ত হবে না।

আগামীর দিকে তাকিয়ে

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী পলক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পেইপ্যাল সেবা জুম চালু হলে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা উপকৃত হবেন, রেমিট্যান্স আসার হারও বাড়বে।

পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য ব্যাংকেও এ সেবা চালুর পাশাপাশি দেশের বাইরে টাকা পাঠানো এবং অনলাইনে কেনাকাটা করার সুযোগ চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।

“বিদেশে টাকা পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি লাগবে। তখন পেইপ্যালের অন্যান্য সেবাও বাংলাদেশ থেকে পাওয়া যাবে।”

২০২১ সাল নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে বাংলাদেশের পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও পেইপ্যালের এই সেবা চালুর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সরকার আশা করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের একজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানান, ফ্রিল্যান্সাররা বিদেশ থেকে আসা তাদের ডলার যেন অ্যাকাউন্ট থেকে ডলার হিসেবেই খরচ করতে পারেন, সে বিষয়েও চিন্তাভাবনা চলছে।

এখন একজন বাংলাদেশি নাগরিক ভ্রমণ কোটায় বছরে ১২ হাজার ডলার খরচ করতে পারেন। ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষেত্রে এই সীমা বাড়ানের বিষয়েও আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।

 

প্রশ্ন

বাংলাদেশে প্রায় দেড় হাজার ফেইসবুক অ্যাপ ডেভেলপার রয়েছেন। গুগলে বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজারে ডেভলপার কাজ করছেন। এর বাইরেও অনেকেই দেশে বসে আউটসোর্সিং করে বিদেশি মুদ্রা আয় করছেন।

ইশতিয়াক আহমেদ তমাল নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পেইপ্যালের সেবা আসা অবশ্যই ভালো। অনেক সময় দেখা যায়, শুধু একটা পেইপ্যাল অ্যাকাউন্ট নেই বলে অনেকের হাত থেকে কাজ ছুটে যায়।

“তবে আমাদের ব্যাংকগুলোতে কী পরিমাণ চার্জ কাটবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার কত হবে- সেটাও দেখার বিষয়।”

আর পেইপ্যালের মাধ্যমে দেশের বাইরে থেকে কিছু কিনতে না পারলে তা ব্যবহারকারীদের জন্য একটি প্রধান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বলে মন্তব্য করেন তমাল।

তিনি বলেন, “আমাদের পারচেজের প্রয়োজন হয় অনেক সময়। যেমন আমি ডিজাইনার। আমি কাজ করি অ্যানিমেশনে। আমার অনেক কিছু বাইরে থেকে কিনতে হয়।

“যারা ওয়েব ডেভেলাপার, তারা ডোমেইন কেনে দেশের বাইরে কারও সাহায্যে। পেইপ্যালে কেনার সুবিধা থাকলে, তারা তাদের নিজেদের ডোমেইন নিজেরাই কিনতে পারতেন।”

আপওয়ার্কে (upwork) কাজ করেন- এরকম একজন ফ্রিল্যান্সার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমার মত অনেকেই পেওনিয়ার (payoneer) সেবা ব্যবহার করে দেশে টাকা আনেন। সেখানে বছরে ৩০ ডলার চার্জ দিতে হয়। আর আমার মাধ্যমে কেউ পেওনিয়ারে অ্যাকাউন্ট খুললে আমাকে দেওয়া হয় ২৫ ডলার।”

ওই ফ্রিল্যান্সার জানান, পেওনিয়ার তাকে মাস্টার ডেবিটকার্ড দিয়েছে। দেশের যে কোনো ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে তিনি টাকা তুলতে পারেন।

“কেউ কেউ আগে থেকেই দেশে ‘ভিন্ন উপায়ে’ পেইপ্যাল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছে। তবে এটা খুবই বিপজ্জনক। পেইপ্যাল কর্তৃপক্ষ যখনই বুঝতে পারে, তখনই এ রকম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়।”

ফ্রিল্যান্সাররা বলছেন, দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এটিএম সেবা সীমিত। ফলে সেসব ব্যাংকে পেইপ্যালের জুম সেবা চালু হলে তাতে ব্যবহারকারীদের খুব বেশি সুবিধা হবে না।